পবিত্র শবে বরাতের ছুটি ২৯ মার্চের পরিবর্তে ৩০ মার্চ। তাই, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে না। তবে, কবে নাগাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে সে সিদ্ধান্তও এখনো হয়নি। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও বাড়তে পারে। এ পরিস্থিতিতে শিগগিরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে তা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেই স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে।
করোনা মোকাবিলায় গঠিত সরকারের জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, যখন সরকার স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন সংক্রমণ অনেক কম ছিল। এখন বেড়েছে। এখন খোলার পরিবেশ নেই। পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে খোলা যায়। এখন ১৩ শতাংশ, অনেক বেশি। এখন করোনা ‘এপিডেমিক’ লেভেলে আছে, ৫ শতাংশের নিচে গেলে ‘এনডেমিক’ লেভেলে চলে যাবে। তখন খোলা যাবে। স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সরকারের অপেক্ষা করা উচিত। কমলে তখন খুলবে। খোলার আগে শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে হবে।
একই মত দিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন। তিনি বলেন, সরকার যখন স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন সংক্রমণের হার ২ শতাংশের মাঝামাঝি ছিল। এখন ১৩ শতাংশে উঠে গেছে। আর এক সপ্তাহ সময় আছে। সংক্রমণ কোন পর্যায়ে যায় বোঝা যাবে। তবে সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে টানা কয়েক মাস থাকলে স্কুল-কলেজ খোলার কথা বলা হয়। সেটা বাংলাদেশে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আবার বেড়ে গেছে। পাশাপাশি শিক্ষক ও ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাও নিশ্চিত করতে হবে। সবকিছু মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জানতে চাইলে বুধবার (২৪ মার্চ) দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় শবে বরাতের ছুটি ২৯ মার্চ ছিল। কিন্তু পরে ইসলামী ফাউন্ডেশন ঘোষণা দিয়েছে ৩০ মার্চ শবে বরাতের ছুটি। সে প্রেক্ষিতে ৩০ মার্চ ছুটি থাকবে।
করোনা ভাইরাসের ঊর্ধবমুখী সংক্রমণের কারণে স্কুল কলেজের ছুটি বাড়ছে কি না জানতে চাইলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপনে প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠানমালা চলছে। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় এ অনুষ্ঠানমালা আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে, শিগগিরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা ২৭ অথবা ২৮ মার্চ ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে অপর একটি সূত্র।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ পিছিয়ে দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথাটি বিবেচনা করে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির ঘোষণা দেয়া হতে পারে বলেও জানান কর্মকর্তারা।
করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি পূণর্বিবেচনা করা হতে পারে বলে গত ১৩ মার্চ জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। সে বিষয়টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। করোনা বাড়তে থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি পুর্নবিবেচনা করা হতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।
গত ১৫ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত নেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে। এটাকে রিভিউ করা হতে পারে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি করোনা মহামারীর কারণে প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর ৩০ মার্চ দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও ২৪ মে থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরুর ঘোষণা দেয় সরকার। সেদিন করোনার শনাক্ত হার ছিল ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। পরের দিন ২৮ ফেব্রুয়ারি শনাক্ত হার আরও কমে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়। এর আগে ফেব্রুয়ারিজুড়ে প্রতিদিন গড়ে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ হারে রোগী শনাক্ত হয়। এমন অবস্থায় পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু মার্চ থেকে হঠাৎ করেই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি শুরু হয়। ওইদিন রোগী শনাক্ত হার এক লাফে ৪ শতাংশের ওপরে উঠে যায়। সেদিন ৪ দশমিক ৩১ শতাংশ হারে রোগী শনাক্ত হয়, যা ছিল তার আগের ৪১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া একই দিন প্রায় এক মাস পর শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যাও ৫০০ ছাড়িয়ে যায়। এমনকি গত তিন সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ দেড়গুণ হারে বাড়ছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৫৬৭ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মারা গেছেন আরও ২৫ জন। গত দুদিন ধরে টানা সাড়ে তিন হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে, এক দিনের মৃত্যুর সংখ্যাও আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে।
সংক্রমণ নিয়ে গতকালও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সচিবালয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ব্রিফিং শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, যে হারে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে বিদ্যমান স্বাস্থ্যব্যবস্থাতেও ‘কুলাবে না’। এজন্য রোগীর উৎপত্তি কমাতে হবে। দেশকে, দেশের অর্থনীতিকে ও দেশের মানুষকে তাদের কাজকর্ম বজায় রাখতে হলে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে।
সংক্রমণের এমন ঊর্ধ্বগতির মুখে ঈদের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার পক্ষে মত দিয়েছেন সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব কর্মকর্তা বলেন, এখন খুললে শঙ্কা থাকে। সরকারের নতুন করে ভাবা উচিত।
এর আগে গত সপ্তাহে দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ১০-১২টি বিষয়ে কঠোর হওয়ার লিখিত সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশেষ করে আগামী এক সপ্তাহ সংক্রমণ পরিস্থিতি দেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আগে যেসব নির্দেশনা ছিল, সেই ১০-১২টি নির্দেশনা সরকারকে আবার দিয়েছি বাস্তবায়ন করার জন্য। কারণ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে বেশ শৈথিল্য দেখা দিয়েছে। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে সামনে বিপদ হতে পারে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সংক্রমণ পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অবশ্য সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকার নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসব কর্মকর্তা বলেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এ নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। তাদের সুরক্ষার কথাটি আগে বিবেচনা করে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও রোগতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা বলে দিয়েছি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে স্কুল-কলেজ খুলতে। সংক্রমণ যদি নিম্নমুখী হয় তাহলে ক্লাস ও ব্যাচ অনুযায়ী স্কুল-কলেজ খুলতে পারে। আর যদি ঊর্ধ্বমুখী থাকে তাহলে সেটা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেবে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।