ঈদের ছুটিতে ঢাকার কাছে বেড়াতে পারেন যেসব জায়গায়

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

ঈদের ছুটিতে বেশিরভাগ মানুষই গ্রামে ছুটেন। তবে যারা রাজধানীতে ঈদের ছুটি কাটাবেন ও আশপাশে কোথাও ঘুরতে যেতে চান, তারা চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন ৫ স্থান। রইলো ঢাকার আশপাশের নিরিবিলি ও মনোরম কয়েকটি স্থানের খোঁজ। পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দল বেঁধে ঘুরে আসতে পারেন এসব স্থানে-   

মৈনট ঘাট

ঈদের ছুটিতে প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন মৈনট ঘাটে। ঢাকার খুব কাছেই স্থানটি ‘মিনি কক্সবাজার’ নামে পরিচিত। ঢাকার খুব কাছাকাছি হওয়ায় ২ ঘণ্টার মধ্যেই আপনি মিনি কক্সবাজারে যেতে পারবেন। তাও আবার মাত্র ৯০ টাকায়। সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় আবার ঢাকায় ফিরেও আসতে পারবেন।

ঢাকার দোহার উপজেলার পশ্চিম প্রান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর কোলে মৈনট ঘাট। দোহার থেকে দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার। নদীর ওপারে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন। গুলিস্তান থেকে সরাসরি পাকা রাস্তা আছে ঘাট পর্যন্ত। এ রুটে বাস সার্ভিসও চালু আছে বহুদিন ধরে। ঢাকা থেকে বাসে যেতে সময় লাগে ২-৩ ঘণ্টা। তবে ছুটির দিনে রাস্তা ফাঁকা থাকলে দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব।

মৈনট ঘাটে যাবেন কীভাবে?

ঢাকা থেকে মৈনট ঘাটে যাওয়ার সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হচ্ছে- গুলিস্তানের গোলাপ শাহর মাজারের সামনে থেকে সরাসরি মৈনট ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া যমুনা পরিবহনে চেপে বসতে পারে। ফেরার সময় একই বাসে আবার ঢাকা চলে আসবেন।

বাহ্রা ঘাট

মিনি কক্সবাজারের মতো ঢাকার আশপাশেই আছে মিনি পতেঙ্গাও। ঢাকার কাছে তেমনই একটি মনোমুগ্ধকর স্থান হলো বাহ্রা ঘাট। দোহার উপজেলায় অবস্থিত এই ঘাট বর্তমানে মিনি পতেঙ্গা নামে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় রাজধানীবাসী ডে লং ট্রিপের জন্য বেছে নেন দৃষ্টিনন্দন এই স্থান। ঢাকার গুলিস্তান থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত। আপনিও ঘুরে আসতে পারেন আপনার ছুটির দিনে।

বিগত কয়েক বছর ধরে বাহ্রাঘাট সেজেছে নতুন আঙ্গিকে। নদীভাঙন ঠেকাতে পদ্মা নদীর পাড়ের দীর্ঘ এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছে ব্লক। এই ব্লকের উপর দিয়েই ঘুরে বেড়ান দর্শনার্থীরা। মৈনট ঘাটের মতোই মিনি পতেঙ্গার পাড় থেকে পদ্মা নদীতে নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো যায় পাড় ধরে।

কীভাবে যাবেন মিনি পতেঙ্গায়?

ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে সেখানে যেতে সময় লাগে মাত্র ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা। গোলাপশাহ মাজার থেকে দোহারের মৈনট ঘাটে সরাসরি বাসে যেতে জনপ্রতি ভাড়া ৯০ টাকা।

লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর

আবহমান গ্রাম বাংলার লোক সাংস্কৃতিক ধারাকে বিকশিত করার উদ্যোগে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগরীর একটি পুরোনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন। পরে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে ১৫০ বিঘা আয়তনের কমপ্লেক্সে খোলা আকাশের নিচে বাংলার প্রকৃতি ও পরিবেশে গ্রামীণ রূপকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের শৈল্পিক কর্মকাণ্ডের পরিচয় তুলে ধরতে শিল্পী জয়নুল আবেদিন এই জাদুঘর উন্মুক্ত পরিবেশে গড়ে তোলার প্রয়াস নেন।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সটি প্রায় ১০০ বছর পুরোনো সর্দার বাড়িতে স্থানান্তরিত হয়। মোট ১০টি গ্যালারি আছে এতে। গ্যালারিগুলোতে কাঠ খোদাই, কারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোকজীবনের পরিবেশ, লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন, তামা-কাসা-পিতলের নিদর্শন, লোহার তৈরি নিদর্শন, লোকজ অলংকারসহ আছে বহু কিছু।

ভবনটির সামান্য পূর্বে দেখবেন লোকজ স্থাপত্যকলায় সমৃদ্ধ আধুনিক এক ইমারতে প্রতিষ্ঠিত জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর। এই ভবননে আছে মাত্র দুটি গ্যালারি। একটি গ্যালারি কাঠের তৈরি, যা প্রাচীন ও আধুনিক কালের নিদর্শনসমৃদ্ধ। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রাকৃতিক, বৈশিষ্ট্য কাঠ ও কাঠ থেকে বিভিন্ন কারুপণ্য তৈরি এমনকি সর্বশেষ বিক্রির সামগ্রিক প্রক্রিয়া, অত্যন্ত আকর্ষণীয়ভাবে সুন্দর মডেল দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরে, দুটি ভবনের বাইরে আছে পাঠাগার, ডকুমেন্টেশন সেন্টার, সেমিনার হল, ক্যান্টিন, কারুমঞ্চ, গ্রামীণ উদ্যান ও বিভিন্ন রকমের বৃক্ষ, মনোরম লেক, লেকের মাঝে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌ বিহার, মৎস্য শিকারের সুন্দর ব্যবস্থা ও নৌকা। চাইলেই মাত্র ১৫০ টাকার বিনিময়ে ৩০ মিনিটে জন্য চালাতে পারবেন এখানে নৌকা। পানাম নগরী থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে আছে লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর। ৫০ টাকা টিকেট কেটে ঢুকেই হাতের বামে পাবেন, বিশাল দিঘী। আর সেই চিরচেনা ভবন বড় সর্দার বাড়ি।

গোলাপ গ্রাম

ঢাকার সাদুল্লাহপুরের গোলাপ বাগান সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনার জানা আছে! খুবই সুন্দর এই স্থানে যেন লাল চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কীভাবে গোলাপের চাষ করা হয়, কীভাবে তা সংগ্রহ করা হয় তা নিজ চোখে দেখতে পারবেন। গোলাপের চারা তৈরি, গোলাপ ক্ষেত পরিচর্যা, গোলাপ তোলা দেখতে দেখতে আপনার মন হারিয়ে যাবে ফুলের রাজ্যে। পরিবারসহ ঘুরতে যেতে পারেন গোলাপ গ্রামে।

কীভাবে যাবেন?

সাদুল্লাহপুর যেতে মিরপুর মাজার রোড হয়ে বেড়িবাঁধ সড়কে যাবেন। এক্ষেত্রে মিরপুর ১ থেকে বাস, টেম্পো, অটোরিকশা বা রিকশায় চড়তে হবে। বেড়িবাঁধ তুরাগের তীর শিন্নিরটেক ঘাট থেকে ট্রলারে উঠতে হবে। এই জলযান আপনাকে সাদুল্লাহপুর ঘাটে নিয়ে যাবে। তবে শুকনো মৌসুমে নদী পার হয়ে বেশ খানিকটা পথ হাঁটতে হবে।

বাংলার তাজমহল

সোনারগাঁওতেই অবস্থিত এই তাজমহল মূলত ভারতের আগ্রায় অবস্থিত তাজমহলের একটি হুবহু নকল বা অবিকল প্রতিরূপ। ১৫০ টাকার এক টিকিটে দুই মুভির মতন, বাংলার তাজমহলের সঙ্গে বাংলার পিরামিড দর্শন করতে পারবেন সেখানে। বাংলার তাজমহলের মালিক আহসানুল্লাহ মনি একজন ধনবান চলচ্চিত্র নির্মাতা।

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে তার ‘তাজমহলের কপিক্যাট সংস্করণ’ প্রকল্পের ঘোষণা করেন। এই তাজমহল নির্মাণের কারণ হিসেবে তিনি জানান, দেশের দরিদ্র মানুষ যাদের ভারত গিয়ে প্রকৃত নিদর্শন দেখার সামর্থ্য নেই তারা যেন তাজমহল দেখার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন, এজন্য দেশেই তিনি তৈরি করেছেন তাজমহলের রেপ্লিকা। হাতে সময় থাকলে সোনারগাঁও গেলে ঘুরে আসতে পারেন বাংলার তাজমহলেও।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবই থেকে শরীফার গল্প বাদ দেয়ার নির্দেশ - dainik shiksha পাঠ্যবই থেকে শরীফার গল্প বাদ দেয়ার নির্দেশ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করেননি কেউ, ইউএনও’র ক্ষোভ - dainik shiksha প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করেননি কেউ, ইউএনও’র ক্ষোভ এক শিক্ষা ক্যাডারে সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের সবাই অতিষ্ঠ - dainik shiksha এক শিক্ষা ক্যাডারে সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের সবাই অতিষ্ঠ পিস্তল দেখিয়ে হুমকি, সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর নামে থানায় অভিযোগ - dainik shiksha পিস্তল দেখিয়ে হুমকি, সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর নামে থানায় অভিযোগ আজ থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা - dainik shiksha আজ থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির জন্য মরিয়া মতিউর - dainik shiksha কাস্টমস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির জন্য মরিয়া মতিউর দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বরাদ্দের টাকা হরিলুট! - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বরাদ্দের টাকা হরিলুট! দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054190158843994