ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিলো তার। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি রচনা করেছেন যুগান্তকারী শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়-সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা। নারীমুক্তির আন্দোলনেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য।

বিদ্যাসাগর একজন সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। বিধবা বিবাহ ও স্ত্রী শিক্ষার প্রচলন, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপ দূরীকরণে তার অক্লান্ত সংগ্রাম আজও স্মরিত হয় যথোচিত শ্রদ্ধার সঙ্গে। বাংলার নবজাগরণের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দয়ার সাগর’ নামে। অসচ্ছল, আর্ত ও পীড়িত কখনোই তার দ্বার থেকে শূন্য হাতে ফিরে যেতো না। এমনকি নিজের চরম অর্থসঙ্কটের সময়ও তিনি ঋণ নিয়ে পরোপকার করেছেন। তার পিতামাতার প্রতি তার ঐকান্তিক ভক্তি ও বজ্রকঠিন চরিত্রবল বাংলায় প্রবাদপ্রতিম। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজের কর্মোদ্যম ও বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি।
বাঙালি সমাজে বিদ্যাসাগর মহাশয় আজও এক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে তার স্মৃতিরক্ষায় স্থাপিত হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী কলকাতার আধুনিক স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বিদ্যাসাগর সেতু তারই নামে উৎসর্গিত। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে বিবিসি বাংলা কর্তৃক পরিচালিত জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০ জন বাঙালির মধ্যে তিনি অষ্টম স্থান লাভ করেন।

ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় শর্মা ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই গ্রামটি অধুনা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত হলেও, সেই যুগে ছিলো হুগলি জেলার অন্তর্ভুক্ত। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতার নাম ছিলো ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতার নাম ছিলো ভগবতী দেবী। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের আদি নিবাস ছিলো অধুনা হুগলি জেলার বনমালীপুর গ্রাম। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ ছিলেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে সুপণ্ডিত ব্যক্তি। তিনিই ঈশ্বরচন্দ্রের নামকরণ করেছিলেন। ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় স্বল্প বেতনের চাকরি করতেন। সেই কারণে ঈশ্বরচন্দ্রের শৈশব বীরসিংহেই তার মা ও ঠাকুরমার সঙ্গে অতিবাহিত হয়।
চার বছর নয় মাস বয়সে ঠাকুরদাস বালক ঈশ্বরচন্দ্রকে গ্রামের সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন। কিন্তু সনাতন বিশ্বাস বিদ্যাদানের চেয়ে শাস্তিদানেই অধিক আনন্দ পেতেন। সেই কারণে রামজয় তর্কভূষণের উদ্যোগে পার্শ্ববর্তী গ্রামের কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নামে এক উৎসাহী যুবক বীরসিংহ গ্রামে একটি নতুন পাঠশালা স্থাপন করেন। আট বছর বয়সে এই পাঠশালায় ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র। তার চোখে কালীকান্ত ছিলেন আদর্শ শিক্ষক। কালীকান্তের পাঠশালায় তিনি সেকালের প্রচলিত বাংলা শিক্ষা লাভ করেছিলেন।

১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে পাঠশালার শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পিতার সঙ্গে কলকাতায় আসেন। তাদের সঙ্গে কলকাতায় এসেছিলেন কালীকান্ত ও চাকর আনন্দরাম গুটিও। কথিত আছে, পদব্রজে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসার সময় পথের ধারে মাইলফলকে ইংরেজি সংখ্যাগুলো দেখে তিনি সেগুলি অল্প আয়াসেই আয়ত্ত করেছিলেন। কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলের বিখ্যাত সিংহ পরিবারে তারা আশ্রয় নেন। এই পরিবারের কর্তা তখন জগদ্দুর্লভ সিংহ। ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজে ( যা বর্তমানে  সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল নামে পরিচিত) ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সংস্কৃত কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে; অর্থাৎ, ঈশ্বরচন্দ্রের এই কলেজে ভর্তি হওয়ার মাত্র পাঁচ বছর আগে। তার বয়স তখন নয় বছর। এই কলেজে তার সহপাঠী ছিলেন মদনমোহন তর্কালঙ্কার। বিদ্যাসাগরের আত্মকথা থেকে জানা যায়, মোট সাড়ে তিন বছর তিনি ওই শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন।

১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব – প্রথম পুস্তক প্রকাশিত। এই বছরের এপ্রিল মাসে বাংলা নববর্ষের দিন  যুগান্তকারী বাংলা শিশুপাঠ্য বর্ণমালা শিক্ষাগ্রন্থ বর্ণপরিচয় প্রকাশিত হয়। কথিত আছে, মফস্বলে স্কুল পরিদর্শনে যাওয়ার সময় পাল্কিতে বসে তিনি বর্ণপরিচয়-এর পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেন। 
১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি বিদ্যাসাগর সিআইই উপাধি পান। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে মেট্রোপলিটান কলেজ থেকে প্রথম বিএ পরীক্ষার্থী পাঠানো হয়। ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ আগস্ট রামকৃষ্ণ পরমহংস তার বাদুড়বাগানের বাড়িতে আসেন। দুজনের মধ্যে ঐতিহাসিক এক আলাপ ঘটে। 
বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে প্রয়াত হন। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ - dainik shiksha ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির - dainik shiksha ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ - dainik shiksha জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024218559265137