উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বর্তমানে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা—সব বিভাগেই শিক্ষার্থীদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) একটি বাধ্যতামূলক বিষয়। সেটিকে অপশনাল (ঐচ্ছিক) করার প্রস্তাব উঠেছিলো জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের এক সভায়। তবে তা নাকচ করে দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপক্ষ।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে আইসিটি বিষয়ের কোনো হের-ফের হচ্ছে না। আইসিটি বিষয়টি ঐচ্ছিক বা বাদ দেয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কার্যত এ বিষয়ে গণমাধ্যমে যে প্রচার হয়েছে তা আসলে সত্যি নয়।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে ২০২৫ শিক্ষা বর্ষের পরে চিন্তা-ভাবনা করা হবে।
সূত্র জানায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর এনসিটিবিতে শিক্ষাক্রম বিষয়ে একটি সভা হয়। সভায় এনসিটিবির চেয়ারম্যান, ঢাকার বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে আইসিটির সিলেবাসের রূপরেখা প্রণয়নের ব্যাপারে আলোচনা হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করে দেয়া পাঠ্যবই পরিমার্জন টিমের সদস্য রাখাল রাহা জানান, উচ্চ মাধ্যমিকে আইসিটি বিষয়টি থাকবে না। উপস্থিত শিক্ষক প্রতিনিধিরা এর প্রতিবাদ জানান। এমন পরিস্থিতিতে এনসিটিবি চেয়ারম্যান জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষকদের উপস্থিতিতে পরবর্তী সভা হবে।
আরো জানা যায়, চার দিন পর পরবর্তী সভার খবর জানতে এনসিটিবিতে যায় আইসিটি শিক্ষকদের একটি গ্রুপ। তাদের বোর্ড থেকে জানানো হয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষকদের ফোন দিয়ে এ বিষয়ে তথ্য নেয়া হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষকদের ওই গ্রুপ এনসিটিবি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে যায়। আবার এনসিটিবির আইসিটির জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত পর্যালোচকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। তবে তারা বিষয়টি নিয়ে কিছুই করতে পারবেন না বলে তাদের জানানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইসিটি শিক্ষক বলেন, ছাত্রদের কোনো সুবিধার কথা চিন্তা না করে খুবই বাজে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে এনসিটিবি, যা দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কারণ হবে। শিক্ষকের অপ্রতুলতা আর ফেলের (অকৃতকার্য) হারের কথা যদি ধরা হয়, তাহলে ইংরেজিকে সর্বপ্রথম অপশনাল করে দিতে হবে।
আরেক শিক্ষক বলেন, বর্তমান বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর। সেখানে আইসিটি বিষয়টির কদর অনেক বেশি। যেখানে আইসিটি বিষয়টি সব বিভাগের জন্য কমন রেখে এর পরিধি বাড়ানো দরকার ছিলো, তা না করে উল্টো এটিকে অপশনাল করার চিন্তা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। এতে বিষয়টি গুরুত্ব হারাবে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখানে আইসিটিকে বাদ দেয়ার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।
অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বলেন, সেখানে (এনসিটিবির সভায়) অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে আইসিটি বিষয় না রাখার কোনো আলোচনা হয়নি। বিষয়টি অপশনাল করা যায় কি না, শুধু সেটি আলোচনা হয়েছে। কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
জানতে চাইলে পাঠ্যবই পরিমার্জন টিমের সদস্য রাখাল রাহা বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে আইসিটি বিষয় বাদ দেয়ার কোনো আলোচনাই হয়নি। পাঠ্যবই থেকে আইসিটি বাদ দেয়া তো অসম্ভব। তবে এটিকে অতিরিক্ত বিষয় করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যদিও তা চূড়ান্ত নয়।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।