উচ্চশিক্ষা পুনর্বিন্যাসের আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে উচ্চশিক্ষাকে পুনর্বিন্যাস করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সোমবার বিকেলে আহছানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। 

তিনি বলেন, আমাদের বিশাল জনসংখ্যা, তাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হলে, বিশ্বে কর্মজগতের যে চাহিদা তা বিচেনায় নিতে হবে। শুধু দেশে নয় বিদেশেরও, কারণ আমরা কখনোই দেশের সমস্ত জনসংখ্যাকে দেশের ভেতরে কর্মসংস্থান করতে পারবো না। তাহলে আমাদের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটকেও বিবেচনায় নিতে হবে। সেই বিশ্ব কর্মবাজারও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। সেই বিশ্ব কর্মজগতের চাহিদাকে মাথায় রেখে প্রত্যেকটি জায়গায় কী ধরনের কাজের চাহিদা রয়েছে সেই ম্যাপিং করে তার ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে যে বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের জন্য কর্ম জগতের ব্যবস্থা করতে পারবো। 

তিনি আরো বলেন, আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে এসে গেছি, আমাদের ২০৩১-২০৩২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্তই আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডেবিডেন্ট অর্জনের সময় রয়েছে। আমাদের যে তরুণ জনগোষ্ঠী আছে, এই সময়টাতেই তাদের সর্বাধিক যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আমারা সেই ডিভিডেন্ট আমরা পাবো, অর্থাৎ বিনিয়োগ হলে আমরা লভ্যাংশ পাবো। 

মন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলছি-পরিবর্তন করতে হবে, নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে, ব্লান্ডেড মেথডে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদের শর্ট কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্সের ব্যবস্থা করতে হবে।  যার পক্ষে সম্ভব সে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে করবে, যার সম্ভব কাজের জায়গা থেকে করবে। 

অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন অধ্যাপক ড. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ফাজলী ইলাহী, আহছানিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।

সমাবর্তনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের কাজের জগত পাল্টে দেবে। আজ প্রাথমিকে যে পড়ছে তার কর্মজততে প্রবেশের সময় বর্তমান কাজের বেশিরভাগই থাকবে না। শিক্ষার্থীদের সেইভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে তারা অভিযোজনে দক্ষ হয়। যেকোনো পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়ে ক্রমাগত পরিবর্তনের গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারে। এখনো প্রায় সে অবস্থা এসে গেছে, এখন আমাদের সেই দক্ষতা শিখতে হবে। 

অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি প্রবণতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কেউ বলতে পারেন আপনি একদিকে বলছেন সবার অনার্স-মাস্টার্স করার প্রয়োজন নেই। আরেকদিকে বলছেন, জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়। এটি কিন্ত সাংঘির্ষিক নয়, আমাদের এখন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে, সেগুলোর শিক্ষার্থীর দিকে তাকালে বোঝা যাবে, আমাদের যে ধারণক্ষমতা তার চেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। সে কারণে অনেক সমস্যা এবং সেই সমস্যাগুলো যাতে না থাকে সেজন্যই জেলায় জেলায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করবার উদ্যোগ। এমন নয় যে তার নিজের জেলাতেই পড়তে হবে, যেখানে তার পছন্দ সেখানেই পড়বেন। কিন্তু কোথাও যেন ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা না হয়। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সবাইকে এ প্রবণতা কমাতে হবে। 

অনুষ্ঠানে ইউজিসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, যেসকল বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করতে পারছে, তাদের বছরের মাঝপথে আরো বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। যারা ব্যয় করতে পারেন না তাদের সমস্যা, যারা ব্যয় করতে পারেন তাদের জন্য সমস্যা নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকার গবেষণাকে উৎসাহিত করবার জন্য বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছেন। 

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা করে করে শিখবে। অভিভাবকেদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপনারা ভাববেন না পরীক্ষা নেই তো শিক্ষর্থীরা কী শিখবে? মূল্যায়ন আছে, পরীক্ষাও আছে, তবে ধারাবাহিক মূল্যায়ন বেশি। সে জন্য অভিভাবকদের বলছি, সন্তানদের আর জিজ্ঞেস করবেন না কতো নম্বর পেলে। দয়া করে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি আজ নতুন কী শিখেছো? শেখাটা জরুরি, নম্বর তার চেয়ে কম জরুরি। আর শিক্ষার্থীকে নম্বরের জন্য চাপ দিতে দিতে তাদের মনে হীনমন্যতার জন্ম দেবেন না দয়া করে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ বছরের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ বছরের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কমিটি স্কুলে ভর্তির আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha স্কুলে ভর্তির আবেদন করবেন যেভাবে এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের ফল বৃহস্পতিবার, জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এইচএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের ফল বৃহস্পতিবার, জানবেন যেভাবে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু ২ জানুয়ারি - dainik shiksha অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু ২ জানুয়ারি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha গণঅভ্যুত্থানে আহতদের তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! - dainik shiksha দপ্তরসহ সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীকে চালাতেন পিয়ন! ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! - dainik shiksha ৬১০ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগ চূড়ান্ত! গণভবন, ভিকারুননিসার বোন ও আইডিয়ালের কলোনি কোটা বাতিল - dainik shiksha গণভবন, ভিকারুননিসার বোন ও আইডিয়ালের কলোনি কোটা বাতিল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ভাসানী, শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দীকেও জাতির পিতা করার পরামর্শ - dainik shiksha ভাসানী, শেরেবাংলা-সোহরাওয়ার্দীকেও জাতির পিতা করার পরামর্শ সমন্বয়কদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, সাবধান: সারজিস - dainik shiksha সমন্বয়কদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই, সাবধান: সারজিস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.016335964202881