জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু ভালো চাকরি পাওয়া নয়। জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে পরিপূর্ণ মানবিক বিকাশ নিশ্চিতকরণ এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সক্ষমতা অর্জন করাই হলো উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের দুই ধরনের লক্ষ্য রয়েছে, তা দুটো মডেলে হয়। এক. ট্রান্সসেকশনাল মডেল আর দ্বিতীয়টি ট্রান্সফরমেশনাল মডেল।
সোমবার (১ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম দিবস উপলক্ষে ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার বলেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উচ্চশিক্ষা প্রদানে ট্রান্সসেকশনাল মডেল গ্রহণ করে, তাঁদের শ্রমবাজারের চাহিদা ও ট্রেন্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে এর ভিত্তিতে কারিকুলাম প্রস্তুত করতে হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা প্রাসঙ্গিক বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা অর্জন করতে পারে, যা তাঁদের কর্মক্ষেত্রে সহজেই কাজ পেতে সহায়তা করে। আর ট্রান্সফরমেশনাল মডেল শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যা বাস্তব জীবনে প্রায়োগিক জ্ঞান এবং কর্মক্ষেত্রের জন্য যথাযথ স্কিল প্রয়োগ করতে শেখায়। এ রকম স্কিল ডেভেলপমেন্ট বেইজড এডুকেশন একজন শিক্ষার্থীকে শ্রম বাজারের চাহিদা অনুসারে সমাজে সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রস্তুত করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের পরমতসহিষ্ণু ও পরমতের প্রতি শ্রদ্ধা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ৭১ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র এই তিন শাসনামলের নানা অন্তরাল অতিক্রম করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগোতে হয়েছে। কঠিন বিপর্যয় মোকাবিলা করেও এ বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্বতা বজায় রেখেছে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমরা গ্লোবালাইজেশনের যুগ বলতাম, এখন বলছি ইন্টারন্যাশনালাইজেশনের যুগ। ইন্টারন্যাশনালাইজেশনের কারণে একজন শিক্ষার্থী শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে চাকরির সুযোগ পাবে। সেভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় আনন্দ পাবে যখন সেটা প্রায়োগিক জীবনে ব্যবহার করতে পারবে। সে রকম কল্যাণমুখী শিক্ষাব্যবস্থার দিকে আমরা এগোব।’
কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল ও হোস্টেল থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শোভাযাত্রা সহকারে স্মৃতি চিরন্তন চত্বরে সমবেত হন। স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে টিএসসি কেন্দ্রের সম্মুখের পায়রা চত্বরে আসেন। সকাল ১০টায় টিএসসি কেন্দ্র সম্মুখের পায়রা চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা, বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সং ও উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশিত হয়।