বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক বাস্তবায়িতব্য ‘হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন এন্ড ট্রান্সফরমেশন (হিট)’ প্রকল্প দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নসহ উচ্চশিক্ষার রূপান্তর, গতি ত্বরান্তিতকরণ, আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ ও উদ্যোক্তা হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর।
বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে হিট প্রকল্পের প্রথম ইমপ্লিমেন্টেশন সাপোর্ট মিশন (আইএসএম) সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ইউজিসি ভবনে গতকাল বুধবার সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) উপাচার্য ড. রুবানা হক, বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র অপারেশন্স অফিসার মোখলেসুর রহমান, ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়াসহ ইউজিসি, বিশ্ব ব্যাংক ও এইউডব্লিউর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রফেসর আলমগীর বলেন, হিট প্রকল্প দেশের শিক্ষা ও গবেষণাসহ উচ্চশিক্ষার বিভিন্নখাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উচ্চশিক্ষায় গৃহীত কার্যকর উদ্যোগ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে শিক্ষাখাতের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা এবং উচ্চশিক্ষা সম্পন্নকারীদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ কর্মক্ষেত্রের সুযোগ তৈরি করা। গৃহীত এ প্রকল্পটি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নারীদের উন্নয়নের একটি বিরাট সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও তাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করাও প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ। এটি নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। এর মাধ্যমে নারীদের উচ্চশিক্ষার ব্যাপক রূপান্তর ঘটাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের উপাচার্য ড. রুবানা হক বলেন, হিট প্রকল্পের মাধ্যমে আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হবে এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম হবে। উচ্চ শিক্ষিতদের জন্য চাকরির সুযোগ সৃষ্টি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার্থীর হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। নারীর উচ্চশিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রকল্পটি একটি আঞ্চলিক মডেল হবে বলে তিনি মনে করেন।
বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র অপারেশন্স অফিসার ড. মোখলেসুর রহমান ইউজিসিকে হিট প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু এবং প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ করেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও ইউজিসির সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংক এ লক্ষ্যে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলে তিনি জানান।
সভা শেষে বিশ্ব ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি দল ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এই সময় ইউজিসি চেয়ারম্যান উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রসঙ্গত, পাঁচ বছর মেয়াদী হিট প্রকল্প শুরু হবে চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইউজিসি। মোট ব্যয়ের মধ্যে ২ হাজার ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকার এবং ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ১১ লাখ টাকা বিশ্ব ব্যাংক বহন করবে।
প্রকল্পে বাজার চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা কোর্স প্রবর্তন, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠা, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের জন্য অ্যাকাডেমিক ও আবাসিক ভবন নির্মাণ এবং দেশের উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী মহিলা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক স্থাপন, বাংলাদেশ গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্কের (বিডিরেন) সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের কার্যাবলী বাস্তবে রুপান্তর করা, ইনোভেশন ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা, প্রতিযোগিতামূলক গবেষণার উদ্ভাবনী প্রকল্প চালু করা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত আছে।