জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ভেঙে ২০ শতাংশ জমি দখলের চেষ্টা চালিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে নগরের পাইকপাড়ায় '১৬ নম্বর বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়' এর একটি একতলা ভবন ভেঙে ফেলার প্রস্তুতি শুরু করে নাসিক কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে সিটি করপোরেশনের লোকজন ফিরে যান। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার দান করা ১৩৩ শতাংশ জমিতে স্কুলটি গড়ে তোলা হয়। ওই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে এই স্কুলের উদ্বোধন করেন। পরে স্কুলের নামকরণ করা হয় '১৬ নম্বর বঙ্গবন্ধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়'। প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছর পর সিটি করপোরেশন স্কুলের ২০ শতাংশ জমি নিজেদের দাবি করে ২০ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মালিকানার প্রমাণ দিতে নির্দেশ দেয়। তবে সিটি করপোরেশন তাদের দেওয়া সময়ের আগেই জমি দখল করতে চলে আসে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোছাম্মৎ হুমায়রা বলেন, ২ অথবা ৩ জানুয়ারি স্কুলটি পরিদর্শনে আসেন সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। ওই সময় তিনি স্কুলের কোনো উন্নয়ন প্রয়োজন কিনা তা জানতে চান। আমি তখন স্কুলের একটি একতলা ভবন জরাজীর্ণ বলে মেয়রকে জানাই। কিন্তু ২০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে আমাকে স্কুলের জমির মালিকানার কাগজপত্রসহ সাত কর্মদিবসের মধ্যে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে চিঠি পেয়ে তিনি বিষয়টি সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। পাশাপাশি তিনি একজন আইনজীবীর মাধ্যমে সিটি করপোরেশন স্কুলের জমির যে দাগ ও খতিয়ান নম্বর উল্লেখ করেছে, ওই সব পর্চা সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত পর্চা অনুযায়ী আরএস খতিয়ানে ১ একর ৩৩ শতাংশ জমির মালিক হিসেবে তৎকালীন পৌরসভার নাম উল্লেখ রয়েছে। জমির প্রকৃতি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে অকৃষি। জমির ওপর স্থাপনা হিসেবে স্কুলের কথাও উল্লেখ রয়েছে। তবে এসএ পর্চার ভলিয়মের দুটি পাতা ছেঁড়া থাকায় সেই কাগজপত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সিএস পর্চায় ওই জমি নাল এবং কবরস্থান হিসেবে উল্লেখ রয়েছে।১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুর করিম বাবু বলেন, রেকর্ড অনুযায়ী স্কুলের কিছু জমিতে আগে কবরস্থান ছিল। স্কুলের পাশেই শিশুনিকেতন নামে একটি বেসরকারি স্কুল রয়েছে। ওই স্কুলের খেলার মাঠ নেই। ওই স্কুলটিকে সুবিধা দিতেই সিটি করপোরেশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি খেলার মাঠের জন্য ব্যবহার করতে চায়। তবে আমার প্রস্তাব জমিটি কবরস্থান হিসেবেই ব্যবহূত হোক।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামাল দেওয়ান বলেন, স্কুলটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এভাবে দখলচেষ্টা ঠিক হয়নি। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা প্রয়োজন ছিল। কারণ স্কুলটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অহিন্দ্র কুমার মণ্ডল বলেন, আমরা বিধি অনুযায়ী এ বিষয়ে অগ্রসর হবো। আমাদের কাছে যেসব কাগজপত্র রয়েছে, সেগুলো সংশ্নিষ্টদের কাছে জমা দেব।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষককে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেটি আমারই স্বাক্ষরিত। তবে আজ (গতকাল) যে তারা উচ্ছেদে গেছে, সেটি আমার জানা নেই। আমি সারাদিন বাইরে ছিলাম।