ভারতের উত্তরপ্রদেশের মাদরাসা শিক্ষা আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে রায় দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) হাইকোর্টের সেই রায় খারিজ করে দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা আইন অসাংবিধানিক নয়। ফলে বন্ধ হচ্ছে না উত্তরপ্রদেশের ১৬ হাজার মাদরাসা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের বেঞ্চ উত্তরপ্রদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা আইন সংক্রান্ত মামলার রায় দেন। এ সময় বিচারপতির বেঞ্চ জানান, মাদরাসা শিক্ষা আইন বৈধ ও সাংবিধানিক। এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দেওয়ার সময় আইনের মৌলিক কাঠামোগত ত্রুটির কথা বলেছিলেন, যা সঠিক নয়।
বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘন করলে আইনটি অবশ্যই বাতিল করতে হবে বলে এলাহাবাদ হাইকোর্ট যে সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, তা ভুল ছিল।’
বেঞ্জ আরও বলেন, ‘শিশুরা যাতে পর্যাপ্ত শিক্ষা পায় তা নিশ্চিত করার জন্য এই আইনটি রাষ্ট্রের ইতিবাচক বাধ্যবাধকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ‘রাষ্ট্র চাইলে মাদরাসা শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। শিক্ষার মান সংক্রান্ত যে প্রবিধান রয়েছে, তা মাদারাসার প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘মাদরাসা আইনে ধর্মীয় প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত আছে বলেই তা অসাংবিধানিক হয়ে যায় না। আইনটি শুধুমাত্র ‘‘ফাজিল ও কামিল’’ ডিগ্রি প্রদানের ক্ষেত্রে অসাংবিধানিক কারণ এই বিধানটি ইউজি প্রবিধান লঙ্ঘন করেছে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনটি উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করা এবং শিক্ষার্থীরা যাতে পাস করে এবং একটি শালীন জীবনযাপন করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য রাজ্যের বাধ্যবাধকতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
ভারতের সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিংহ যাদব মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে ২০০৪ সালে ‘উত্তরপ্রদেশ মাদরাসা বোর্ড শিক্ষা আইন’ কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ সরকারে আসার পর রাজ্যের মাদরাসাগুলো নিয়ে সমীক্ষা শুরু করে। একই সময়ে মাদরাসা শিক্ষা আইনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এলাহাবাদ হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়।
গত মার্চ মাসে আবেদনকারীর আবেদনে সাড়া দিয়ে হাইকোর্ট মাদরাসা শিক্ষা আইনকে ‘অসাংবিধানিক এবং ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের পরিপন্থী’ বলে বাতিল করেন।
পরে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। আজ মঙ্গলবার সেই মামলায় রায়ে মাদরাসার পুরনো আইনকে ‘বৈধ’ বলে রায় দিলো শীর্ষ আদালত।