উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নে আমাদের জাতীয় সংগীত ‘জনগণ মন’

মুরাদ মজুমদার |

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) একটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন গণ মন’ গানটিকে ‘জাতীয় সংগীত’ বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই গানে ‘আমাদের জাতীয় ঐক্যকে লালন করার ও এতে নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে’। গানটিতে রবীন্দ্রনাথ কি বার্তা দিয়েছেন সে উত্তর দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিক্ষার্থীরা। আর সংশ্লিষ্ট পরিমণ্ডলে তৈরি হয়েছে তুমুল সমালোচনা।

এই বিতর্কিত প্রশ্ন প্রণয়নের ঘটনাটি ঘটেছে ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ের বিএ (অনার্স) প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের আবশ্যিক ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষায়। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে নির্ধারিত ওই পরীক্ষাটি গত শুক্রবার নেয় বাউবি। ঢাকা কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ৪৮ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন। ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় সময় ছিলো চার ঘণ্টা।  তাতে প্রতি গ্রুপ থেকে চারটি করে প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়। প্রথম গ্রুপের প্রথম প্রশ্নে একটি অনুচ্ছেদ দিয়ে নিচে পাঁচটি প্রশ্ন দেয়া হয়। অনুচ্ছেদটির দ্বিতীয় প্যারায় লেখা হয়েছে, …. ‘Millions of voices have sung the National Anthem `Jana Gana Mana,’ calling upon us to nourish the unity of our country and be devoted to it. অনুচ্ছেদটির শেষে দেয়া পাঁচটি প্রশ্নের চতুর্থটিতে রবীন্দ্রনাথ এই গানের মাধ্যমে ‘আমাদের কী বার্তা দিয়েছেন’ তা জানতে চাওয়া হয়েছে। 
দৈনিক আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভারতের এক ওয়েবসাইট থেকে হুবহু তুলে দেয়া হয়েছে এই অনুচ্ছেদ ও সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন।   

এমন পশ্ন পেয়ে শিক্ষার্থীরা হতচকিত হয়ে পড়েন। কারণ ‘আমাদের’ বা ‘আমাদের দেশের’ বলতে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতই বোঝানো হবে। কিন্তু, বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’। আর প্রশ্নপ্রত্রে উল্লেখ করা গানটি ভারতের জাতীয় সংগীত। আর ভারতের জাতীয় সংগীতে কী করে ‘আমাদের’ বা বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্য লালনের আহ্বান জানানো হয়েছে তা কারোরই বোধগম্য হয়নি।  

উপরন্তু, প্যারাটির প্রথম লাইনে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের কথা উল্লেখ থাকায় সেটি ওই বছরই গাওয়া হয় বলে মনে হয়। প্রকৃতপক্ষে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর কলকাতায় আয়োজিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ২৬তম বার্ষিক অধিবেশনে কবিগুরুর ওই গানটি গাওয়া হয়। তার পরের দিন ‘দ্যা বেঙ্গলি’ পত্রিকায় গানটির ইংরেজি অনুবাদসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় ভারত বিধাতা নামে প্রকাশিত হয় গানটি। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে সুভাসচন্দ্র বসু প্রথম গানটিকে জাতীয় সংগীত

করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু, তখনও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের জন্ম না হওয়ায় সেটি করা সম্ভব হয়নি। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর কোনো একটি অনুষ্ঠানে বাজানোর জন্য জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতীয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে একটি জাতীয় সংগীত চাওয়া হয়। তখন ‘জন গণ মন’ গানটির একটি রেকর্ড পাঠানো হয়। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি গানটিকে ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এর সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই প্রশ্নপত্রে এমন অনুচ্ছেদ সীমাহীন বিষ্ময় ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। 

এমন বিতর্কিত প্রশ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার দৈনিক আমাদের বার্তাকে ওই বিতর্কিত প্রশ্নের একটি কপি পাঠানোর অনুরোধ জানান। প্রশ্নের কপি পাঠানো হলে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট স্কুল পরীক্ষার ব্যাপারটা দেখে। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে বাউবির স্কুল অব সোশ্যাল সায়েন্স, হিউম্যানিটিজ ও ল্যাংগুয়েজেস স্কুলের ডিন অধ্যাপক ড. মো জাহাঙ্গীর আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ - dainik shiksha ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির - dainik shiksha ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ - dainik shiksha জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026159286499023