উপজেলা শিক্ষা কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) চেয়ারম্যান পদে দেখতে চান জেলা প্রশাসকরা। বর্তমানে এসব কমিটির প্রধান উপজেলা চেয়ারম্যান। ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলন শুরু হচ্ছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে ডিসিরা আগাম সুপারিশ পাঠিয়েছেন। তাতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক মোট ৮টি সুপারিশ রয়েছে।
শরীয়তপুরের ডিসি যুক্তি দেখান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কমিটিতে চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হলে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিদ্যালয় পরিদর্শন ও শিক্ষা গুণগতমান নিশ্চিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
নওগাঁর ডিসির সুপারিশ হচ্ছে-সরকারি অর্থের অপচয় রোধ ও শিক্ষার্থী-শিক্ষকের যৌক্তিক অনুপাত বজায় রাখতে যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অল্প শিক্ষার্থী আছে সেগুলোকে পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঠিক অনুপাত তৈরি হলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া বগুড়ার ডিসি দুই শিফটের বিদ্যালয়ে তিন জন ও এক শিফটে কমপক্ষে ছয় জন শিক্ষককে নিয়োগ ও লালমনিরহাটের ডিসি জাতীয়করণকৃত সরকারি বিদ্যালয়ে শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করেছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কোটা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর থেকে দেশে সরকারি চাকরিতে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে (সাবেক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে সরকার। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ অনুসারে সরাসরি নিয়োগযোগ্য পদের ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা আর ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা রাখা হয়েছে।
এই নিয়োগ সম্পর্কেই কুড়িগ্রামের ডিসি তার প্রস্তাবে বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপজেলাভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে পোষ্য কোটা আছে। এতে অধিকতর যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও অনেক দুর্বল প্রার্থী শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাচ্ছেন। ফলে তিনটি সমস্যা হচ্ছে।
এগুলোর মধ্যে আছে-শিক্ষকতার মান কমে যাচ্ছে; একই পরিবারে চাকরিজীবীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে এবং দরিদ্র পরিবার/মেধাবী প্রার্থী বঞ্চিত হচ্ছে ও সরকারি নীতি ‘প্রতি পরিবারে চাকরি’- এই উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। তিনব্যাপী সম্মেলন শেষ হবে ২৬ জানুয়ারি। এ সম্মেলনের সার-সংক্ষেপ অনুমোদনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো ফাইল ফেরত এসেছে বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, তারা ডিসিদের পাঠানো সুপারিশ পেয়েছেন। সেগুলো পর্যালোচনা চলছে।ডিসিদের সুপারিশপত্রে বিভিন্ন ধরনের ছুটি এলাকাভিত্তিক করার প্রস্তাব দেখা যায়। যেমন : কিশোরগঞ্জের ডিসি প্রস্তাব করেছেন-হাওড় অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোতে গ্রীষ্মকালীন ছুটি যেন ২৫ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত কার্যকর করা হয়। বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩ জুলাই থেকে ১৯ জুলাই এবং প্রাথমিকে ২৮ জুন থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত আছে। কিন্তু বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় হাওড়াঞ্চলে উল্লিখিত সময়ে নৌকা বা হেঁটে শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া-আসায় অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।