দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক: সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির আওতাভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিকৃত উপবৃত্তি যোগ্য শিক্ষার্থী নির্বাচনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তথ্য এইচএসপি এমআইএস সফটওয়্যারে এন্ট্রি করতে বলেছে সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি। প্রতিষ্ঠানের পর্যায়ের গঠিত কমিটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই, তালিকা প্রণয়ন ও তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের তথ্য এইচএসপি এমআইএস সফটওয়্যারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) থেকে উপবৃত্তির এইচএসপি এমআইএস সফটওয়্যারে একাদশের নতুন শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্তি শুরু হয়েছে। আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা যাবে এ সফটওয়্যারে।
সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি থেকে বিষয়টি জানিয়ে সব উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার চিঠিটি প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
জানা গেছে, উপবৃত্তি পেতে কর্মসূচির আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে। আবেদন প্রাতিষ্ঠানিক কমিটির মাধ্যমে যাচাই বাছাইয়ের পর যোগ্যদের তথ্য এইচএসপি এমআইএস সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কমিটির সদস্যদের প্রয়োজনে শিক্ষার্থীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবেদনপত্রের তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে হবে।
দারিদ্যের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হবে। দারিদ্র্য নিরূপণের জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ব্যবহৃত প্রশ্নমালার ওপর ভিত্তি করে একটি নমুনা আবেদনপত্রে আবেদন করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে তথ্য যাচাই বাছাই করে যোগ্য শিক্ষার্থীর তথ্য এইচএসপি এমআইএসে এন্ট্রি করতে হবে। প্রতিষ্ঠান থেকেই এসব তথ্য অনলাইনে উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠাতে হবে। উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপবৃত্তির জন্য সব আবেদন উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার উপদেষ্টা কমিটির কাছে বিবেচনার জন্য পেশ করবেন। উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন নিয়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর তথ্য উপজেলা বা থানা থেকে আগামী ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে এইচএসপি-পিএমইএটিতে পাঠাবেন। সারাদেশে উপকারভোগী শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয়ভাবে এইচএসপি-এমআইএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে নির্বাচন করবে সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি।
১০টি উপজেলার ক্ষেত্রে উপবৃত্তির সফটওয়্যারে এন্ট্রি করা সব শিক্ষার্থী উপবৃত্তির জন্য নির্বাচিত হবে। এ উপজেলাগুলো হলো বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, আলিকদম, কুড়িগ্রামের সদর, চর রাজিবপুর, চিলমারী ও উলিপুর, দিনাজপুরের কাহারোল ও খানসামা এবং কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লৈঙ্গিক ভিত্তিতে নয় বরং দারিদ্র্যের ভিত্তিতে উপকারভোগী শিক্ষার্থী নির্বাচন হবে। ফলে এ প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কম বেশি হতে পারে। শারীরিক প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গ, প্রাক্তন ছিটমহলের বাসিন্দা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্ম যথাযথ যাচাই বাছাইয়ের পর সরাসরি এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে এই ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ দেয়া সনদ বা প্রত্যায়ন পত্রের সত্যায়িত কপি এমআইএসে সংযুক্ত এবং সংরক্ষণ করতে হবে। প্রাক্তন ছিটমহল এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোকে নতুন শিক্ষার্থী এন্ট্রি ফরমে আবেদনকারী বসবাসের স্থান প্রাক্তন ছিটমহল নির্বাচন করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রমাণ সংযুক্ত করার প্রয়োজন নেই। সব শিক্ষার্থীর ১৭ সংখ্যার অনলাইন জন্মসনদ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
জানা গেছে, শিক্ষার্থী অন্য কোনো সরকারি উৎস থেকে উপবৃত্তি অথবা অভিভাবক কর্তৃক শিক্ষাভাতা গ্রহণ করলে উপবৃত্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। এছাড়াও শিক্ষা বোর্ড থেকে মেধা বা সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী উপবৃত্তি প্রাপ্তির জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, উপবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীর তথ্য এইচএসপি ও এমআইএসে এন্ট্রি করলেই উপবৃত্তি পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। আবেদনকারী শিক্ষার্থী দেয়া তথ্য এইচএসপি এমআইএসের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়।
জানা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বা বেতন মওকুফ থাকবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অনুকূলে স্কিম ডকুমেন্ট মোতাবেক নির্ধারিত হারে টিউশন ফি বা বেতন দেয়া হবে। উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনোক্রমেই টিউশন ফি বা বেতন আদায় করা যাবে না।
নতুন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে পাঠদানের অনুমতি বা স্বীকৃতি পেলে তা সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। সেক্ষেত্রে এইচএসপি ও এমআইএসের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে স্কিম পরিচালক বরাবর আবেদন করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে কয়েকদফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এগুলো মধ্যে আছে, একই অ্যাকাউন্ট নম্বর বা মোবাইল নম্বর একাধিক শিক্ষার্থীর জন্য এন্ট্রি করা যাবে না। অন্য কোনো শিক্ষার্থীর নামে আগে অন্তর্ভুক্ত হওয়া অ্যাকাউন্টের তথ্য পুনরায় এন্ট্রি করা যাবে না। শিক্ষার্থীর জন্মসনদ নম্বর অবশ্যই ১৭ ডিজিটের হতে হবে। বাবা ও মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর অবশ্যই এন্ট্রি করতে হবে। ১৩ সংখ্যার জাতীয় পরিচয় পত্রের ক্ষেত্রে প্রথমে জন্মসালের চার ডিজিট বসিসে তা ১৭ সংখ্যার রূপান্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে কোন বৈধ বা সচল অনলাইন ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষার্থীর অভিভাবক হবেন বাবা বা মা। কেবল মাত্র বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে অন্য কোনো ব্যক্তিকে (ভাই বা বোন বা দাদা বা দাদী বা নানা বা নানী) অভিভাবক হিসেবে নির্বাচন করা যাবে। তথ্য এন্ট্রির সময় বাবাকে অভিভাবক নির্বাচিত করলে বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং অভিভাবক ও হিসাবধারীর নাম হিসাবে বাবার নাম এন্ট্রি করতে হবে। অভিভাবক হিসাবে মাকে নির্বাচিত করলে মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং অভিভাবক ও হিসাবধারীর নাম হিসাবে মায়ের নাম এন্ট্রি করতে হবে। বাবা-মায়ের অনুপস্থিতিতে অন্য কোন ব্যক্তিকে অভিভাবক নির্বাচিত করলে তার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং অভিভাবক ও হিসেবধারীর নাম হিসাবে তার নাম এন্ট্রি করতে হবে। স্কুল ব্যাংকিং বা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে যার নামে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে হিসাবধারীর নাম হিসাবে তার নাম এন্ট্রি করতে হবে।
সমন্বিত উপবৃত্তি কর্মসূচি বলছে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তার আওতাধীন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিষয়টি অবহিত করে মনিটরিং করবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে সৃষ্ট যেকোন সমস্যার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন। উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইউজার আইডি বা পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে বা অন্য কোন কারণে এইচএসপি এমআইএসে লগ ইন করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা-থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ই মেইলে ( [email protected]) যোগাযোগ করতে হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাঠানো চিঠিতে, শিক্ষার্থী নির্বাচন, আবেদন, আবেদন যাচাই-বাছাই, অ্যাকাউন্ট খোলা, শিক্ষার্থী নির্বাচন ও তথ্য অন্তর্ভুক্তির বিস্তারিত প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে। একইসাথে শিক্ষার্থীদের আবেদন ফরমও প্রকাশ করা হয়েছে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের পাঠকদের জন্য নির্দেশনা ও আবেদন ফরম তুলে ধরা হলো।