একটি ধারণা প্রচলিত– প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা এইচএসসি পাস হলেই যথেষ্ট। তাঁদের প্রশিক্ষণের তেমন প্রয়োজন নেই। তাঁরা ভাবেন, তৃতীয়, চতুর্থ কিংবা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতে আবার কী জ্ঞান বা দক্ষতা লাগে! একুশ শতকে এ ধারণা হাস্যকর। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধে আরও জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণিতে বাংলায় ৫৩ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী যথাযথ যোগ্যতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। একইভাবে গণিত বিষয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ৬৬ শতাংশ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী যথাযথ যোগ্যতা প্রদর্শন করতে পারেনি। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নের সঙ্গে এই ফল তুলনা করলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতার চিত্র ধারাবাহিকভাবে বর্তমান। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা ও গণিতের ফল তুলনা করলে দেখা যায়,
তাদের পঞ্চম শ্রেণির ফলের উন্নতি তো হয়ইনি, বরং অবনতি হয়েছে। কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ১৮ মাসের ডিপিএড প্রশিক্ষণ বাতিল করে ১০ মাস স্থায়ী একটি মৌলিক প্রশিক্ষণ চালু করেছে। ১ জুলাই এর কার্যক্রম উদ্বোধন হয়েছে। এ প্রশিক্ষণ সম্পর্কে জনগণকে তেমন কিছু জানানো হয়নি। সে জন্য এ প্রশিক্ষণের ভালো-মন্দ কিছু বলা যাবে না। কিন্তু ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ সংকোচন করে কেন ১০ মাস করা হলো, এর জন্য বিস্তারিত গবেষণা করা হয়েছে কিনা এবং তার সুপারিশের আলোকে এ প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে কিনা, তা আমরা জানি না। আমরা মাঠ পর্যায়ের নিবিড় অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করেছি, প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের আরও দীর্ঘ সময় পিটিআই ইনস্ট্রাক্টরদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে শ্রেণিকক্ষের অনুশীলনী করা দরকার। কিন্তু বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং তা সম্পূর্ণ বাতিল করে বর্তমান মৌলিক প্রশিক্ষণে নিজ বিদ্যালয়ে চার মাস অনুশীলনী পাঠদানের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা কীভাবে এবং কার তত্ত্বাবধানে করা হবে, তা বোধগম্য নয়।কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত অনুশীলনী পাঠ ছাড়া শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ লাভ সম্ভব হবে না। প্রকৃতপক্ষে এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প কার্যকর হবে না। ডিপিএড প্রশিক্ষণ সে ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারত। কিন্তু কোনো উপযুক্ত বিকল্প ছাড়া এ প্রশিক্ষণ সংকোচন করা মোটেই বাস্তবোচিত হয়নি।
লেখক : শামিম আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও টিম লিডার, ডিপিএড কর্মসূচি, প্রাথমিক শিক্ষা