উপসচিব পদে কোটা বাতিল দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তারা

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

উপসচিব পদে কোটা বাতিলের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন সিভিল সার্ভিসের ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তারা। সরকারি নিয়োগে বা নিয়োগের পর চাকরিতে কোনো প্রকার কোটা না রাখার পক্ষে ওই ক্যাডার কর্মকর্তারা। তাদের দাবি মানা না হলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন । তারা বলছেন, সচিবালয়ে একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় এবং বিগত সরকারকে নির্বাচনী সুবিধা দেওয়ার শর্তে একটি ক্যাডার উপসচিব পদের ৭৫ শতাংশ কোটা নিজেদের করে নেয়। এতে সিভিল প্রশাসনে মেধার পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এমন পরিস্থিতিতে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা যেসব দাবি করছেন, সেগুলো হলো-উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। এসএসপি পুল ১৯৭৯ পুনর্বহাল করতে হবে। সব ক্যাডারের মধ্যে উন্মুক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণদের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদে নিয়োগ দিতে হবে। উপসচিব নিয়োগে সব ক্যাডারের মধ্যে একই ব্যাচভিত্তিক নিয়োগ পরীক্ষা নিতে হবে। উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদকে ক্যাডার বহির্ভূত পদ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। উন্মুক্ত পরীক্ষা গ্রহণের জন্য পিএসসিকে নির্দেশ প্রদান করতে হবে। উপসচিব নিয়োগ-সংক্রান্ত ১৯৮০-২০২৪ সাল পর্যন্ত জারিকৃত সব প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে। উপসচিব কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত উপসচিব নিয়োগ স্থগিত রাখতে হবে। অতিরিক্ত সচিব পদে নিয়োগের পূর্বে পুনরায় উন্মুক্ত পরীক্ষা নিতে হবে।

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলেন, ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার, উপসচিব পদে বিদ্যমান কোটা বিলোপ ও সব ক্যাডারের মধ্যে সমতার বিধানসহ সিভিল সার্ভিসে সব রকম বৈষম্য বিলোপের দাবি নিয়ে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ ইতোমধ্যে কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন। উপদেষ্টারা সব রকম কোটা বাতিল ও বৈষম্য নিরসনের পক্ষে মত দিয়েছেন। পরিষদ ইতোমধ্যে সব ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে জেলায় জেলায় কমিটি করেছেন। দাবি আদায়ে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে তারা উচ্চ আদালতে মামলাও করেছেন।

গণপূর্ত ক্যাডারের জামিলুর রহমান বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করলে ২০ ফেব্রম্নয়ারি ২০০৮ তারিখে তা খারিজ হয়ে যায়। ফলে হাইকোটের্র রায়টি বহাল রয়ে যায়। তখন এই রায় নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে তোলপাড় শুরু হয়। রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হলে সরকার মামলাটি পুনরায় আপিল বিভাগে শুনানির অনুরোধ জানায়। প্রশাসন ক্যাডার তখন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন রকম দেনদরবার শুরু করেন। প্রশাসন ক্যাডারের চাপে সরকার অন্তরালে বিভিন্ন রকমের সমঝোতার মাধ্যমে আপিল বিভাগে শুনানির ব্যবস্থা করেন। মামলার বাদীরা উলেস্নখ করেন, অন্তরালের সমঝোতার কারণে প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মাত্র ১০ মিনিটের শুনানিতে হাইকোর্টের রায়কে উল্টে দেন। এমনকি এই রায়ের বিষয়ে রিভিউ পিটিশন দাখিল করলে আবেদনকারীকে কোনো রকম অবহিত না করেই তা খারিজ করে দেওয়া হয়।

তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা উমর ফারুক দেওয়ান বলেন, ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে ক্যাডার সার্ভিস চালুর সময় উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদগুলোতে সব ক্যাডার থেকে বাছাই করে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও মেধাবী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার কথা। সরকার পিএসসির সঙ্গে পরামর্শক্রমে যোগ্য কর্মকর্তা নির্বাচনের জন্য একটি সিলেবাস প্রণয়ন করে। সিলেবাস অনুযায়ী, পরীক্ষা নিয়ে যোগ্য কর্মকর্তা বাছাইয়ের উদ্যোগও নেয় পিএসসি। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তার কারণে তা কার্যকর করা যায়নি। সিনিয়র সার্ভিস পুল পরীক্ষা ভুল করার মাধ্যমে জনপ্রশাসনের উচ্চস্তরে এসব পদে অভিজ্ঞ, দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তাদের নিয়োগের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

কর ক্যাডারের সাজ্জাদ হোসেন ভূইয়া বলেন, ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ছাত্র-গণ-অভু্যত্থানের পর গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলে বিভিন্ন ক্যাডার বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিতে আনে। ফলে ৮ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৯২ তারিখে সরকার জনপ্রশাসন সংস্কার-বিষয়ক মতিন কমিটির সব সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয় এবং 'সিনিয়র সার্ভিস পুল আদেশ, ১৯৭৯' পুনর্বহাল করে। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডার উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পদের কোটার ভাগাভাগি বাতিল করেনি। এটাকে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারকে 'অন্ধকারে' রাখার সঙ্গে তুলনা করেছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন: তৃতীয় দিনের ভাইভায় যেসব প্রশ্ন - dainik shiksha অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধন: তৃতীয় দিনের ভাইভায় যেসব প্রশ্ন এমপিও শিক্ষকদের বদলি আবেদন শুরু ১ নভেম্বর - dainik shiksha এমপিও শিক্ষকদের বদলি আবেদন শুরু ১ নভেম্বর পান থেকে চুন খসলেই ঘুষ নেন শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha পান থেকে চুন খসলেই ঘুষ নেন শিক্ষা কর্মকর্তা শিবিরের আত্মপ্রকাশের খবরে জাবিতে প্রতিবাদ মিছিল - dainik shiksha শিবিরের আত্মপ্রকাশের খবরে জাবিতে প্রতিবাদ মিছিল কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করায় সিটি কলেজ শিক্ষক বহিষ্কার - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করায় সিটি কলেজ শিক্ষক বহিষ্কার please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027370452880859