কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) আইন অনুযায়ী তিন মাস অন্তর সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা। কিন্তু চার মাসেও সিন্ডিকেট সভা করছেন না উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন। সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভা হয়েছিল গত বছর ২৫ আগস্ট।
জানা গেছে, সিন্ডিকেট সভা আয়োজন করতে না পারার কারণ ‘নিয়মবহির্ভূতভাবে’ নিয়োগ দিতে না পারা, অপছন্দের শিক্ষকদের পদোন্নতি না দেওয়া ও পূর্ববর্তী সিন্ডিকেট সভার বিবরণী সরবরাহ না করা প্রভৃতি। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১৮-এর (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রতি ৩ (তিন) মাসে সিন্ডিকেটের কমপক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হইবে।’ গত বছর ৩১ জানুয়ারি যোগদানের পর এখন পর্যন্ত তিনটি সিন্ডিকেট সভা করেছেন উপাচার্য। দুটি সভা যথাসময়ে করতে পারেননি। সর্বশেষ সভা হয়েছে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ আগস্ট। ৮৫তম সিন্ডিকেট সভার পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও সভা আর হয়নি। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর ৮৬তম সভা আহ্বান করা হয়েছিল। নিয়োগ শেষ করতে না পারা, পদোন্নতিতে অনিয়ম প্রভৃতি কারণে এ সভাও স্থগিত হয়। গত ২ নভেম্বর বিশেষ প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি ভেঙে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কুবি। বিজ্ঞপ্তি নিয়ে শিক্ষকদের অভিযোগ থাকলেও আমলে নেননি উপাচার্য। আদালত রিটকারীদের সঙ্গে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে বলেছে। আদালত ১৫ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়ে তৎক্ষণাৎ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করে। রিটকারী শিক্ষকদের সঙ্গে বিষয়টির নিষ্পত্তি না করে ২২ ডিসেম্বর ওই বিজ্ঞপ্তির অধীনে দুটি বিভাগের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর বিভাগ দুটিসহ আরও দুটি বিভাগের ভাইভা বোর্ডের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ সংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হলে আবার নিয়োগ স্থগিত করেন তিনি। নিয়োগ কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় ২৯ তারিখের সিন্ডিকেট সভাও স্থগিত করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের পদোন্নতির শর্ত পূরণ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারা পদোন্নতির আবেদন করেন। তবে উপাচার্য আবেদনকারী শিক্ষকদের জন্য বোর্ড আয়োজন না করে তার অনুসারী শিক্ষকদের পদোন্নতি বোর্ড আয়োজন করেন। যদিও তারা পরে আবেদন করেছেন। তার অনুসারী শিক্ষকরা আবেদনের এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বোর্ডের ডাক পেলেও অনেকে মাস পেরিয়ে গেলেও বোর্ডের ডাক পাননি। ইংরেজি ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকরা ৭ ডিসেম্বর আবেদন করে যথাক্রমে ১৩ ও ১৯ ডিসেম্বর পদোন্নতি বোর্ড পেয়েছেন। উপাচার্যের অনুসারী না হওয়ায় ২১ নভেম্বর ও ৪ ডিসেম্বর আবেদন করে গত ২ জানুয়ারি পর্যন্ত বোর্ডের ডাক পাননি ওই দুটি বিভাগের অন্য শিক্ষকরা।
২০ ডিসেম্বর শিক্ষক সমিতি থেকে তাদের বোর্ড গঠন করে সিন্ডিকেট সভা করার আবেদন করা হয়। উপাচার্য শিক্ষক সমিতির আবেদন অগ্রাহ্য করে সিন্ডিকেট সভা ডাকলেও সভা করতে পারেননি তিনি। যদিও এখনো ইংরেজি ও অর্থনীতি বিভাগ ছাড়া অন্য দুটি বিভাগের বোর্ড আয়োজনের তারিখ জানা যায়নি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের কার্যপরিচালনা বিধি (১০.১) অনুযায়ী, সভা শেষ হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে সভার সব সদস্যের কাছে লিখিত কার্যবিবরণী সরবরাহের কথা রয়েছে। সভায় উপস্থিত কোনো সদস্য যদি মনে করেন, কার্যবিবরণী যথাযথভাবে অনুলিখিত হয়নি, তাহলে কার্যবিবরণী হাতে পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে সচিবকে তার সংশোধনী সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। ৮৫তম সিন্ডিকেট সভা শেষ হওয়ার চার মাস পরও কার্যবিবরণী হাতে পাননি সিন্ডিকেট সদস্যরা। একাধিক সিন্ডিকেট সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের একজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। তিনি বলেন, কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভার কার্যবিবরণী আমি পাইনি। সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য এবং কুবির একটি অনুষদের ডিনও একই কথা বলেছেন। এসব বিষয়ে কথা বলতে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের মোবাইলে একাধিকবার কল করে ও খুদেবার্তা পাঠিয়ে তাকেও পাওয়া যায়নি। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, বিশ^বিদ্যালয় পরিচালনায় আইন ও বিধিবিধান মেনে চলা উচিত। আইন মানলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বিশ^বিদ্যালয়ের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।