এ বাজেট শিক্ষা ধ্বংসের : ছাত্র ফ্রন্ট

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘শিক্ষা ধ্বংসের বাজেট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট্রের নেতারা। তারা বলছেন, জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত জনগণকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত। জিডিপির অনুপাতে বাজেটে কম বরাদ্দ শিক্ষার প্রতিটি স্তরে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। 

শুক্রবার দুপুরে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত জনগণকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চক্রান্ত। গত ১ জুন প্রস্তাবিত হলো দেশের ৫২তম বাজেট। এ বাজেট শিক্ষা ধ্বংসের বাজেট। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। উপরন্তু এই বাজেট মানুষকে হাত-পা বেঁধে পানিতে ফেলে দেয়ার সামিল। কারণ জনগুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোয় যেমন বরাদ্দ কমেছে তেমনি শিক্ষা খাতেও  কমেছে।  ইউনেস্কোর মতে, কোনো দেশের জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা উচিত। সেখানে এ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ জিডিপির মাত্র  ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ! গত বাজেটে যা ছিলো ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় এ বরাদ্দ খুবই কম, কিন্তু সরকার এই অর্থ বছরে আরো কমিয়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে বাজেটে কম বরাদ্দ শিক্ষার প্রতিটি স্তরেই মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে।

নেতারা আরো বলেন, শিক্ষার অধিকার মৌলিক এবং মানবিক। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এ অধিকার তার নাগরিকদের জন্য নিশ্চিত করে। কিন্তু আমরা এর উল্টোটা দেখতে পাচ্ছি। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমানোর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ও সরকার একদিকে যেমন শিক্ষা সংকোচনের পথে হাঁটছে, অপরদিকে শিক্ষার অধিকার থেকে নাগরিককে বঞ্চিত করছে। অন্যদিকে বরাদ্দ কমানোর মধ্য দিয়ে পুরো শিক্ষা খাতকে বেসরকারিকরণ-বাণিজ্যিকীকরণের পথে নিয়ে যাচ্ছে। যার ভবিষ্যৎ ফল হবে অন্ধকারময়।

তারা আরো বলেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য চারটি স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। সেগুলো হলো, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি। একদিকে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের রুটি-রুজির জোগাড়েই নাকাল। অন্যদিকে স্মার্ট নাগরিক তৈরির পূর্বশর্ত শিক্ষা অথচ স্মার্ট সরকার জনগোষ্ঠীর একটা অংশকে শিক্ষার অধিকার বঞ্চিত করছে সুকৌশলে। যারা সংসারের অন্যদিকের ব্যয় কমিয়েও ভাবতেন তাদের সন্তানরা লেখাপড়া করুক- এখন তাও আর সম্ভব নয়। আরো উল্লেখযোগ্য দিক হলো ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে যেসব পণ্যের দাম বাড়বে তার মধ্যে কলমসহ অন্যান্য  শিক্ষা উপকরণও আছে। দফায় দফায়  গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কারণে প্রত্যেকটি পণ্যের দাম চড়া। বাজেটের এই ঘোষণা শিক্ষার্থী এবং অবিভাবকদের ওপর আরো প্রবল চাপ তৈরি করবে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট্রের নেতারা শিক্ষাখাতে বরাদ্দ কমানোর প্রতিবাদ জানান এবং পর্যাপ্ত বরাদ্দের দাবিতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক- অভিভাবকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) অনুপাতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির তুলনায় ১ দশমিক ৭৬ শতাংশের কথা বলা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। তবে, টাকার অংকে বেড়েছে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ। শিক্ষার তিন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ে নতুন অর্থবছরে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সম্মিলিতভাবে চলতি অর্থবছরের থেকে নতুন অর্থবছরে ৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 

জানা গেছে, নতুন অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে ২ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ৪২ হাজার ৮৩৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছিলো। নতুন অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে ২ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছিলো। নতুন অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে ৮৭৫ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বিভাগে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছিলো। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054471492767334