চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে বেসরকারি কলেজগুলোর দাপট বাড়ছে। গত বছরের মতো এবারও শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সবগুলোই বেসরকারি। তবে শিক্ষার্থী বেশি থাকায় জিপিএ ৫ প্রাপ্তির ভিত্তিতে সরকারি কলেজগুলো ঠিকই এগিয়ে রয়েছে। এবারের প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ৭৪ হাজার ১২৫ জন, ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। এদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ২৬৯ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
জিপিএ ৫-এর ভিত্তিতে সেরা হওয়া সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি কলেজে এখন তুলনামূলকভাবে ক্লাস কম হয়। বছরের বেশিরভাগ সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স, মাস্টার্স ও পাস কোর্সের বিভিন্ন পরীক্ষা থাকে। এসব পরীক্ষার কারণে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। এ চিত্র প্রায় সব সরকারি কলেজগুলোয়। এতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসমুখীর পরিবর্তে কোচিংমুখী হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, সরকারি কলেজগুলোয় অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এতে ক্লাসও বেশি। কিন্তু সেই অনুযায়ী অবকাঠামোগত সমস্যা যেমন রয়েছে তেমনিভাবে শিক্ষক স্বল্পতাও রয়েছে। বিপরীতে বেসরকারি কলেজগুলোয় এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না।
এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসা ড. শামসুদ্দিন শিশির। তিনি বলেন, ‘সরকারি কলেজগুলোয় শিক্ষার্থীরা আগের মতো ক্লাস পায় না। ফলে তারা কোচিংমুখী হয়ে যাচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ফলাফলে। কিন্তু বেসরকারি কলেজগুলোয় জবাবদিহির কারণে শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকলে তা অভিভাবক পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়। ফলে এসব কলেজে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার তুলনামূলকভাবে বেশি। আর এর প্রভাবই পড়ছে ফলাফলে।’
এ বিষয়ে কথা হয় পাসের হারের ভিত্তিতে প্রথম হওয়া চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মর্জিনা খানমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কলেজে পরপর দুদিন যদি কোনো শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে তাহলে তার অভিভাবককে ফোন করা হয়। এ ছাড়া একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর যেসব শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় পাস করতে পারবে না তাদের উত্তীর্ণ করা হয় না। সর্বশেষ প্রাক নির্বাচনী ও নির্বাচনী পরীক্ষায় বাছাই করে বোর্ড পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়। যারা খারাপ করে তাদের কয়েক দফা পরীক্ষা নেওয়া হয়। আর এজন্যই গত বছর আমাদের আটজন শিক্ষার্থী ফেল করলেও এবার কেউ ফেল করেনি।’
সামগ্রিক ফলাফলে সরকারি কলেজগুলো পিছিয়ে থাকার কারণ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, ‘বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের চাকরির জবাবদিহি বেশি। এ ছাড়া ভালো ফলাফলের জন্য তাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতাও কাজ করে, যা সরকারি কলেজের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। আর এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে পরীক্ষার ফলাফলে।’
কিন্তু এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা এবং সবচেয়ে বেশি নম্বর প্রাপ্তরা সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে থাকে। তারপরও কেন ফেল করবে? জিপিএ ৫ কেন পাবে না? এমন প্রশ্ন ইতিমধ্যে অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যেও উঠছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এসএসসির পর এইচএসসিতে এসে ব্যাপক সিলেবাসের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা খাপ খাওয়াতে পারে না। তাই এসএসসিতে ভালো ফলাফল করলেও এইচএসসিতে এসে তা ধরে রাখতে পারে না।’
চট্টগ্রাম কলেজে চট্টগ্রাম বোর্ডের সবচেয়ে বেশি নম্বরধারী শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েছিলেন। আর তারা সবাই ছিল গোল্ডেন জিপি ৫-ধারী (অতিরিক্ত বিষয়ের সহায়তা ছাড়া জিপিএ ৫ পাওয়া)। তারপরও এই কলেজ থেকে ১ হাজার ১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ৯৯৯ জন ও জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৮৪০ জন। এর কারণ কী? এই প্রশ্নের জবাবে কলেজটির অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করলেও মানবিকের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে রয়েছে। আর এতেই তুলনামূলকভাবে জিপিএ ৫ আসেনি।’