সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মনসুর নগর ইউনিয়নের এম. মনসুর আলী জাতীয় উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পরিবর্তন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁস ও নকল বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ১১ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং একজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৭ দিনের জেল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ( ৯ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদটি শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়। সংবাদে উল্লেখ করা হয় সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মনসুর নগর ইউনিয়নের এম. মনসুর আলী জাতীয় উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্রে চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোন দেখে লিখছে, পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কক্ষ পরিদর্শক। জানা গেছে, মাত্র দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে এভাবেই উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা দিচ্ছে এই কেন্দ্রের প্রায় এক হাজার পরীক্ষার্থী! কেন্দ্র কমিটিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কব্জায় নিয়ে পরীক্ষার্থীদের জন্য এমন বন্দোবস্ত করেছে একটি চক্র। বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখা মিলিয়ে অন্তত ৯টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে এই কারবার চালাচ্ছে চক্রটি।
আরো পড়ুন: পাঁচ হাজার টাকায় মেলে এইচএসসির প্রশ্ন সঙ্গে জিপিএ ৫
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার দুর্গম এক জনপদ মনসুর নগর ইউনিয়ন। সেখানে উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকের জন্য একটি মাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলহাজ ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ। তার পাশেই এম মনসুর আলী জাতীয় উচ্চবিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টিই অত্র অঞ্চলের এইচএসসি পরীক্ষার একমাত্র কেন্দ্র। যা শুধুমাত্র করা হয়েছে ফরহাদ আলী মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের জন্য। দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় উপজেলা সদর থেকে এই কেন্দ্রে সড়ক ও নৌপথে পৌঁছাতে সময় লাগে চার থেকে ছয় ঘণ্টা। ফলে উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিস থেকে কেউ কেন্দ্র পরিদর্শনে যান না বললেই চলে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রটিকে ঘিরে গত ছয় বছর ধরে চলছে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে নকল বাণিজ্যের উৎসব।
বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য শাখা মিলিয়ে অন্তত ৯টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে এই কারবার চালাচ্ছে চক্রটি। গ্রুপগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘মিশন এ প্লাস’ ও ‘রাসেলস ভাইপার’। গ্রুপ দুটিতে বিজ্ঞান বিভাগের প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী যুক্ত আছে। যারা সবাই একই কলেজ ও কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী।
সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসককে উল্লিখিত বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক জানান, প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জনকে বহিষ্কার, ১ জনকে ৭ দিনের জেল, কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনসহ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।