এবারের এইচএসসিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের রসায়ন দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নে কিছু ভুল ও অসঙ্গতি দেখা গেছে। এতে পরীক্ষার হলে চরম বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। এমনকি নটর ডেম কলেজের মতো ভালো কলেজের পরীক্ষার্থীরাও এমন ভুল প্রশ্নে বিব্রত হয়েছেন।
এবার যেহেতু সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা, তাই রসায়নে মাত্র চারটি অধ্যায়ের আংশিক বা শর্ট সিলেবাস থেকে প্রশ্ন প্রণয়নের কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ২৫ নম্বরের এমসিকিউতে চার অধ্যায়ের মধ্যে একটি থেকেই ১০টি বা ১০ নম্বরের প্রশ্ন করা হয়েছে। বাকী তিনটি অধ্যায় থেকে ১৫টি প্রশ্ন করা হয়েছে। এমনটা কিছুতেই কাম্য নয়।
যে অধ্যায় থেকে ১০টি প্রশ্ন করা হয়েছে, সেই অধ্যায়টির নাম জৈব যৌগ। এ অধ্যায়টি খুবই জটিল। নিয়ম অনুযায়ী চারটি অধ্যায়ের প্রতিটি থেকে ৬ মার্ক করে মোট ২৪ মার্ক এবং যে কোনো একটি অধ্যায় থেকে অতিরিক্ত একটি প্রশ্ন করে মোট ২৫ মার্কের প্রশ্ন করা যুক্তিসংগত।
উদ্দীপকে ভুল
রসায়ন দ্বিতীয়পত্রের সৃজনশীল প্রশ্নের ৮ নম্বর প্রশ্নের উদ্দীপক ভুল। কোনো রাসায়নিক সমীকরণে তীরের ওপরের অংশে বিক্রিয়ক দিয়ে শুরু হয় না। যদি প্রোপিন লিখে দেওয়া হতো তাহলেও হতো। কিন্তু প্রোপিনটা তীরের ওপরের অংশে লেখায় উদ্দীপক ভুল হয়েছে। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন নি। ফলে তাদের ১০ মার্ক প্রশ্ন প্রণয়নের ভুলেই হারিয়ে গেছে।
এমসিকিউতে চার ভুল
বহু নির্বাচনী প্রশ্ন বা এমসিকিউ অংশে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে প্রশ্ন করায় পরিক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হয়েছেন।
এ অংশের প্রশ্নে মোট চার প্রকারের ভুল করা হয়েছে।
১. সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন: কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষিতে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষার পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী যে সিলেবাস তৈরি করা হয়েছিল শিক্ষার্থীরা সে অনুযায়ী পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু খ সেটের দুটি প্রশ্ন সিলেবাসের বাইরে থেকে করা হয়েছে। এগুলো হলো- ১. নম্বর প্রশ্ন, অক্সিজেনের তুল্য ভর কত? ও ৮ নম্বর প্রশ্ন, SnO2 এর ক্ষারত্ব কতো?
২. প্রশ্ন ভুল : ৭ নম্বর প্রশ্নে লেখা আছে বিক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্যাস হতে…. কিন্তু উদ্দীপকে কোন বিক্রিয়া নেই। ১৬ নম্বর প্রশ্নে লেখা আছে, কোনটি অর্থো প্যারা নির্দেশক? এর অপশন (ক) তে আছে –NO2 - এই যৌগটি রসায়ন বইয়ের কোথাও নেই। এই অপশনটা অর্থো প্যারা নির্দেশক হবে কিনা তা নিয়ে শিক্ষার্থীরা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পরীক্ষার হলে তাদের সময় নষ্ট হয়।
৩. কনফিউশন : ২০ নম্বর প্রশ্নে উদ্দীপকের অপশন ii এ যুত বিক্রিয়া দেয় কথাটি দিয়ে কনফিউশন তৈরি করা হয়েছে। ২৩ নম্বর প্রশ্নের (খ) নম্বর অপশনে এমোনিয়া ও কার্বন ডাই অক্সাইড দুটোই লিখে পরিক্ষার্থীদের কনফিউজড করা হয়েছে। এই অপশন থেকে এমোনিয়া বাদ দেওয়া উচিত ছিলো।
৪. প্রশ্ন ১ মার্কের উপযোগী নয় : ১১ নম্বর প্রশ্নে বলা হয়েছে, যৌগ B ও C এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এরা উভয়েই …. এই প্রশ্নটি ১ মার্কের প্রশ্ন না । এটা মূলত ৪ মার্কের প্রশ্ন। এমন প্রশ্ন ১ মিনিটে উত্তর দেওয়ার জন্য এমসিকিউ অংশে দেওয়া কোনোক্রমেই সঠিক নয়। সৃজনশীল সিস্টেমে যে ২৫টি এমসিকিউ প্রশ্ন এসেছে সেগুলোর উত্তর ২৫ মিনিটে দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এসব প্রশ্ন সৃজনশীলের লিখিত অংশে এলে পরীক্ষার্থীরা খাতা কলমে লিখে উত্তর দিতে পারতেন, তাতে তাদের এমসিকিউ দক্ষতাও যাচাই হতো।
একাধিক পরীক্ষার্থী আমাকে জানিয়েছেন, ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষের উচিত, সিলেবাসের বাইরে থেকে আসা প্রশ্ন ও ভুলের জন্য যতো মার্কের সমস্যা হয়েছে সব মার্ক প্রতিটি পরীক্ষার্থীকে দিয়ে দেওয়া। তাতে অন্যসব বোর্ডের সঙ্গে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের বৈষম্য কমবে।
আমাদের ভাবা উচিত, একটি প্রশ্নের ১ মার্ক ভুল হলে ১০ লাখ পরীক্ষার্থীর ১০ লাখ মার্কের ভুল হয়ে যায়।
লেখক : বিদ্যুৎ কুমার রায়, নবম-দশমের রসায়ন গ্রন্থ প্রণেতা