নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়এক কোর্সে সবাইকে সমান নম্বর, খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি শিক্ষার্থীদের

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

শিক্ষার্থী মোট ২৭ জন। ইন্টারনাল কোর্সের পরীক্ষায় মোট নম্বর ছিল ৪০। ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, সবাই ৩৭ নম্বর করে পেয়েছেন! এই কাণ্ড ঘটেছে ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ‘ইনট্রোডাকশন টু বিজনেস’ (কোর্স কোড-১১১) পরীক্ষায়। প্রত্যেক শিক্ষার্থীই প্রেজেন্টেশনে ১০ নম্বর, নিয়মিত ক্লাসে না থাকলেও উপস্থিতির পূর্ণ ১০ নম্বর পেয়েছেন, আর দুটি মিড-টার্ম মিলিয়ে প্রত্যেককে ২০ নম্বরের মধ্যে ১৭ করে দিয়ে দিয়েছেন কোর্স শিক্ষক হিল্লোল ফৌজদার।

এ ছাড়া অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮ সালের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত পরীক্ষা ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের প্রকাশিত ফলাফলে নম্বর ঘষামাজার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর জের ধরে শিক্ষার্থীরা খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে বিভাগীয় প্রধানকে কক্ষে আটকে রেখে বিক্ষোভ পর্যন্ত করেছেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের ২৭ মার্চ কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮ সালের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়। ওই ফলাফলে নম্বর জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে বিভাগীয় প্রধান এবং পরীক্ষা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে। ২৯ মার্চ ফল পুনর্মূল্যায়ন চেয়ে শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধানকে তাঁর কক্ষে আটকে রাখেন। প্রতিকার চেয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ না হওয়ায় জারমিনা রহমান নামের এক শিক্ষার্থী নম্বর ঘষামাজা ও অনিয়মের অভিযোগ এনে উচ্চ আদালতে রিট করেন। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১ আগস্ট বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি আখতারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। ওই রুলে জানতে চাওয়া হয়, চূড়ান্ত ফল ঘোষণা

এবং পুনঃপরীক্ষণ/পুনর্মূল্যায়নপূর্বক ফল প্রকাশে ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না। রিটের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।

এ ছাড়া গত ১৭ আগস্ট একই বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশিত হয়। এর নম্বরপত্রে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষক ও বহিঃস্থ পরীক্ষকের নম্বরে পার্থক্যের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০ এবং গড়ে ১০ নম্বর। এ ছাড়া ১৪১৫১৮১৯৫১১ রোলধারী শিক্ষার্থী মোট নম্বর ৭৫ পেলেও দেওয়া হয়েছে ৫৪। অপর এক শিক্ষার্থী (১৪১৫১৮১৯৫১৭ রোলধারী) মোট ৭৪.৫ পেলেও ফলাফলে দেখানো হয়েছে ৫৪। একই রকম ঘটনা ঘটেছে ১৪১৫১৮১৯৫৪৩ ও ১৪১৫১৮১৯৫৪৪ রোলধারীদের ক্ষেত্রেও। নম্বরে এ রকম অসংগতি থাকায় পুনরায় খাতা মূল্যায়নের দাবি নিয়ে ২১ আগস্ট বিভাগীয় প্রধানের কক্ষে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের তোপের মুখে ফলাফলের সমস্যা থাকলে তিনি পুনরায় যাচাইয়ের আশ্বাস দেন বলে জানান একাধিক শিক্ষার্থী।

এ ব্যাপারে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।

অন্যদিকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের সবাইকে ৩৭ নম্বর করে দেওয়ায় শিক্ষক হিল্লোল ফৌজদারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হন। পরে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা ভেবেই এমনটি করেছেন দাবি করে এ বিষয়ে হিল্লোল বলেন, ‘তারা যেন উৎসাহ না হারায়, সে কারণে আমি সবাইকে ভালো নম্বর দিয়েছি। ’

এর আগে গত জুলাই মাসে ফোকলোর বিভাগের প্রধান সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধেও নম্বর ঘষামাজার অভিযোগ তুলেছিলেন শিক্ষার্থীরা।

একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এক শিক্ষকের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলে অন্য পক্ষের শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীকে কম নম্বর দেন।

এ কারণে অনেক মেধাবীকেও খারাপ রেজাল্ট নিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়তে হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, নম্বর ঘষামাজার বিষয়টি প্রমাণ করছে শিক্ষকদের নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটেছে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

নম্বর ঘষামাজার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘আমি চাই না কোনো শিক্ষক এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হোক। শিক্ষকদের এহেন মানসিকতা পরিবর্তনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আশা করছি সুস্থ ধারা ফিরে আসবে। ’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027511119842529