সরকারের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার বিধান থাকলেও দীর্ঘ ১০ বছর পর তা দাখিল করেছেন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা। সর্বশেষ ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে চিঠি দিয়ে সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছিল। এরপর আর তা দাখিল করা হয়নি। ফলে ১০ বছর অনেক কর্মকর্তার বৈধ-অবৈধ সম্পদ বেড়েছে।
এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত সব পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়। গত ১৩ আগস্ট আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এ হিসাব দাখিল করতে বলা হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর ছিল সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার শেষ দিন।
আগামী সপ্তাহে গণনা: এরই ধারাবাহিকতায় সারাদেশে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব দাখিল করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে গণনা শুরু হবে বলে আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তথ্যানুযায়ী, দেশের ৬৪ জেলা অধস্তন আদালতে ২ হাজার ৮১ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৮৬ জন বিচারক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, কমিশন, সংস্থা ও অধিদপ্তরে প্রেষণে রয়েছেন। তারা সবাই সম্পদের হিসাব বিবরণী যথাসময়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দপ্তরে জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রশাসন ও ঢাকা কোর্টে কর্মরত বিচারকরা স্ব-স্ব ফরম পূরণ করে সরাসরি তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেন। আর ঢাকার বাইরে কর্মরত বিচারকরা ডাকযোগে পাঠিয়েছেন।
একাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কতিপয় বিচারকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। মূলত তাদের বৈধ আয়ের বাইরে বাড়তি আয় গোপন রাখার প্রবণতা থেকে সম্পদের হিসাব দিতে কারও কারও অনীহা ছিল।
এ বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, সব বিচারক তাদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিল করেছেন। এখন গণনা করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে কর্মরত ৪৫ বিচারক ইতোমধ্যে তাদের সম্পদ বিবরণীর তালিকা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে একজন বিচারক জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের মতোই প্রতি পাঁচ বছর পরপর বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দাখিলের বিধান রয়েছে। কিন্তু সরকারের উদাসীনতার কারণেই সেটা বন্ধ ছিল। উল্টো হিসাব বিবরণী জমার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন কেউ কেউ। তবে তা মন্ত্রণালয়ে ধোপে টেকেনি। কিন্তু আয়কর রিটার্নে প্রতিবছর সম্পদের হিসাব জমা দেওয়া হচ্ছে।