বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগগুলো যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়, সে জন্য নতুন করে পরিকল্পনা করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে দ্রুত সময়ে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল দেওয়া, লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখার সময় কমিয়ে আনা, খাতা বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে না দেখলে পরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পিএসসি। এ পরিকল্পনা নিয়ে চাকরি-বাকরির সঙ্গে কথা বলেছেন পিএসসির চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন। শুক্রবার (২৪ জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানা যায়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মোছাব্বের হোসেন।
প্রশ্ন: দ্রুত সময়ের মধ্যে ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে পিএসসির রেকর্ড হয়েছে। এটি কীভাবে সম্ভব হলো?
সোহরাব হোসাইন: গত বুধবার বিকেলে ৪৪তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশ করে পিএসসি। এতে ১৫ হাজার ৭০৮ প্রার্থী পাস করেন। এই প্রার্থীরা এখন লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেবেন। ২ লাখ ৭৬ হাজার ৭৬০ প্রার্থী প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেন। চলতি বছরের ২৭ মে ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় প্রার্থীরা অংশ নেন। ৪৪তম বিসিএসে মোট আবেদন করেন ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭১৬ জন।
৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা গত মে মাসে নেওয়ার পর এক মাসের আগেই দ্রুত সময়ের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। মাত্র ২৫ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ পিএসসির ইতিহাসে রেকর্ড। সঠিক পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন করার কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ সম্ভব হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
এর আগে ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর। আর ফলাফল প্রকাশ হয় ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি। অর্থাৎ প্রিলির ফল তিন মাসের মধ্যেই প্রকাশ করা হয়েছিল। একইভাবে ৪১তম বিসিএস প্রিলির ফল প্রকাশ করতে চার মাস সময় লাগে।
সঠিক পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল। এটি আগে থেকে করার কারণে দ্রুত ও কম সময়ের মধ্যেই ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা গেছে। এই ধারাবাহিকতা আমরা ধরে রাখতে চাই। বিসিএসে যত ভাবে সময় কমিয়ে এনে যাতে দ্রুত সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়, সে চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে দ্রুত সময়ে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। এক বছরেই যাতে একটি বিসিএসের নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করা যায় সে জন্য চেষ্টা চলছে।
প্রশ্ন: বিসিএসে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে কোন পরীক্ষায়? এটি কমাতে কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?
সোহরাব হোসাইন: বিসিএসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ লিখিত পরীক্ষা। এই ধাপে বিষয়ভিত্তিক ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। এই ধাপের ফল পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয় প্রার্থীদের। ফলে একটি বিসিএস শেষ হতেই কয়েক বছর লেগে যায়। লিখিত পরীক্ষার খাতা যাতে কম সময়ে দেখা শেষ করে ফলাফল দেওয়া যায়, এ জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
লিখিত পরীক্ষায় আবশ্যিক ছয়টি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ ছাড়া কারিগরি বা পেশাগত বিষয় থাকে, যা ধাপে ধাপে নেওয়া হয়। এসব পরীক্ষা দিতেও যেমন পিএসসির অনেক সময় লাগে, তেমনি ফলাফল দিতেও সময় লাগে। মূলত বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল দিতে বেশি সময় লাগে এই লিখিত পরীক্ষা নেওয়া ও খাতা দেখানোর কাজে।
খাতা দেখার পর মার্কস স্বাভাবিক না হলে তা তৃতীয় পরীক্ষকের কাছেও পাঠানোর নিয়ম আছে। এই বিপুল কর্মযজ্ঞে সময় লাগার কারণে বিসিএসের সার্বিক ফলাফল দিতে অনেক সময় লাগে।
লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখতে কিছু কিছু পরীক্ষক বেশি সময় নিচ্ছেন বলে পর্যবেক্ষণ করেছে পিএসসির কমিটি। খাতা দেখার জন্য এখন থেকে পরীক্ষকদের সময় নির্ধারণ করে দেওয়ার নিয়ম চালু করেছে পিএসসি। এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাতা দেখতে না পারলে ওই পরীক্ষককে আর কোনো খাতা দেখতে দেওয়া হবে না বলে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খাতা দেখার টাকা আগের থেকে বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে খাতা দেখা শেষ করতে না পারলে পরীক্ষকের কাছে খাতা নিয়ে নেওয়া হবে এবং আর খাতা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হবে না। সর্বোপরি তাঁকে খাতা দেখার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। এটি করা গেলে বিসিএসে দীর্ঘ সময় কমে আসবে। আরও কম সময়ে বিসিএসের চূড়ান্ত ফল দেওয়া যাবে। তবে এ জন্য পরীক্ষককে আরও বেশি আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান হতে হবে।
প্রশ্ন: বিসিএসে সময় কমিয়ে আনতে আরও কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন?
সোহরাব হোসাইন: আমরা চাই বিসিএসের সময় যত কম লাগে সে ব্যবস্থা করতে। এ জন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে যে যে পারদর্শী, তাঁদের সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে। সব কাজ সবাই ভালো পারে না। যে যেই কাজ ভালো পারেন, তাঁকে সেই কাজ দেওয়া হবে। যদি কেউ কাজ ফেলে রাখেন, তাহলে তাঁকে আমরা সেই কাজ দেব না। এ ছাড়া প্রতিটি বিসিএসের আগে আমরা পরিকল্পনা করব। এবং যে যে প্রতিশ্রুতি দেব, সেটি অক্ষরে অক্ষরে পালনের ব্যবস্থা করব। আপনারা লক্ষ করবেন, এখন পিএসসি প্রতিটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় উল্লেখ করছে। এটি ঠিক রাখার চেষ্টা করব। কারণ, আমরা এমনভাবে ভেবেচিন্তে সময়গুলো বেঁধে রাখছি, যাতে এটি নিয়ে কোনো দ্বিধা কাজ না করে। এ ছাড়া কাজের সময়ের বাইরেও পিএসসি সরকারি ছুটির দিনে বিশেষ ব্যবস্থায় কাজ করছে। স্বচ্ছতা বজায় রাখছে। আমাদের কারণে যাতে কোনো পরীক্ষা বা ফল প্রকাশে দেরি না হয়, সেটিতে নজর রাখা হচ্ছে।
প্রশ্ন: প্রতিটি বিসিএসের আগে ফেসবুকে নানা গুজব দেখা যায়। কয়েক বছর ধরে বিসিএসের চাকরি নিয়ে তরুণদের বিপুল আগ্রহ বাড়ার পর থেকে পিএসসির নামে ফেসবুকে একাধিক গ্রুপ ও পেজ চালু হয়। এসব গ্রুপের ছবি ও নাম এমনভাবে দেওয়া, যাতে দেখে মনে হয় পিএসসি এসব পেজ বা গ্রুপ তৈরি করেছে। কোনো কোনো পেজ ও গ্রুপে বিসিএসের প্রিলিমিনারি, লিখিত বা ভাইভার সম্ভাব্য তারিখ দেওয়া হয়। এসব দেখে অনেকে এটি পিএসসির দাপ্তরিক ঘোষণা মনে করেন। আবার চূড়ান্ত সুপারিশ কবে দেওয়া হতে পারে, তারও ঘোষণা এসব পেজ ও গ্রুপে দেওয়া হয়ে থাকে। এটি ফেসবুক পেজ পিএসসির নামেও চালানো হয়। এ বিষয়ে কিছু বলবেন?
সোহরাব হোসাইন: সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নামে ফেসবুকে যত গ্রুপ বা ফেসবুক পেজ আছে, তার সব কটিই ভুয়া। কোনোটিই পিএসসির দাপ্তরিক পেজ বা গ্রুপ নয়।
‘যে পেজের কথা বলছেন, তা পিএসসির কোনো পেজ নয়। এখানে প্রিলিমিনারির যে তারিখের কথা বলা হয়েছে, তার আগেও ফল প্রকাশিত হতে পারে। এ ধরনের ভুয়া পেজের কোনো বক্তব্য পিএসসির দায় নয়। এখানের কোনো কিছুর বিষয়ে পিএসসির অনুমতি নেই। আমরা এই পেজের বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাব।