এক বেঞ্চেই ২০ হে*রো*ইন মা*ম*লায় জামিন, স্থগিত করলেন চেম্বার আদালত

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

চলতি অবকাশে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন হেরোইন মামলার ২০ আসামি। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় পৃথক মামলা রয়েছে। সম্প্রতি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তারা। তবে জামিন পাওয়া আসামিদের কারামুক্তি ঠেকাতে রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তার নির্দেশে ত্বরিত পদক্ষেপ নেয় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়। এরপরই এসব জামিন আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে যায় রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল বুধবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম সব জামিন আদেশ স্থগিত করে দেন। এই স্থগিতাদেশের ফলে হেরোইনের মতো ভয়ংকর মাদক মামলার এসব আসামিদের কারাগারেই থাকতে হচ্ছে বলে জানান আইনজীবীরা।

রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, চলতি অবকাশে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ থেকে ২০ হেরোইনের মামলায় জামিন হয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন পরিমাণের হেরোইন জব্দ করা হয়েছে। রাসায়নিক পরীক্ষায় হেরোইন প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণত স্বাভাবিক সময়ে উচ্চ আদালত থেকে এ ধরনের ভয়ংকর মাদকের মামলায় এত জামিন পাওয়ার নজির দেখা যায় না। আমরা হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করি। আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে চেম্বার আদালত জামিন স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন।

এই বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আনোয়ারা শাহজাহান বলেন, চলতি মাসে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে সাত দিন বিচার কাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিনই কিছু না কিছু হেরোইনের মামলায় জামিন হয়েছে। জামিন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা স্থগিতের জন্য নোট দিয়েছি।

জানা গেছে, গাজীপুরের কালীগঞ্জের পানজোড়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের পুত্র শামীম আহমেদ সামিউল। গত বছরের পহেলা জুলাই ৩০০ গ্রাম হেরোইনসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। পরদিন তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে পুলিশ। গত ১৭ জুলাই গাজীপুরের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসামির জামিন নামঞ্জুর করেন। এই জামিন নামঞ্জুরের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করে জামিন চান ঐ আসামি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর আসামিকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আসামিকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না এই মর্মে রুল জারি করে। বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর দ্বৈত অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ জামিন দেন।

একই বেঞ্চ ১২৭ গ্রাম হেরোইনের মামলায় জামিন দেয় মাদক ব্যবসায়ী মো. শরিফ উদ্দিনকে। তাকে গত ৬ এপ্রিল হেরোইনসহ গ্রেফতার করে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানা পুলিশ। ঐ মামলায় গত ১২ জুলাই আসামি শরিফকে জামিন দেয়নি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। এরপর তিনি জামিন চান হাইকোর্টে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ আসামিকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের পাশাপাশি রুল জারি করেন। রুলে তাকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

এভাবে হেরোইনের ২০ মামলার জামিন দেয় ঐ হাইকোর্ট বেঞ্চ। জামিন পাওয়া এসব মাদক মামলায় হেরোইনের সর্বোচ্চ পরিমাণ ছিল ৭৭৫ গ্রাম। এছাড়া অন্যান্য মামলায় হেরোইনের পরিমাণ ছিল ৬৮০ গ্রাম, ৫১৫ গ্রাম, ৫১২ গ্রাম, ৩০০ গ্রাম, ২৫০ গ্রাম, ২০৮ গ্রাম, ২০৫ গ্রাম, ১০৫ গ্রাম, ১০০ গ্রাম, ৫৫ গ্রাম, ৫০ গ্রাম ও  সর্বনিম্ন ২৭ গ্রাম।

একপর্যায়ে একই বেঞ্চ থেকে হেরোইনের মামলার জামিন পাওয়ার বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেলকে অবহিত করা হয়। এরপরই সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয় জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে। তারই অংশ হিসেবে জামিন স্থগিত চেয়ে দ্রুত চেম্বার আদালতে আবেদন করা হয়।

স্থগিত আবেদনে বলা হয়, হেরোইনের মতো মাদক যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। বিনষ্ট করছে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা। আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। দেওয়া হয়েছে চার্জশিটও। অনেক মামলার বিচার চলছে আদালতে। এসব বিষয় বিবেচনায় না নিয়ে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছে। আসামিরা জামিন পাওয়ায় ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বাধার সৃষ্টি করবে। শুনানি শেষে ২০ মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আট সপ্তাহের জন্য স্থগিতের আদেশ দেয় চেম্বার বিচারপতি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, জামিন দিতে আইনে কোনো বাধা নাই। তবে এসব গুরুতর অপরাধের মামলার বিষয়বস্তুর ওপর রাষ্ট্রপক্ষ যদি উচ্চ আদালতে জোরালোভাবে বিরোধিতা করতে পারত তাহলে হয়তো আসামিদের জামিন হতো না। এজন্য রাষ্ট্রপক্ষকে আরো সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, আসামিদের কারামুক্তির আগেই সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপক্ষকে সাধুবাদ জানাই।

আইনজীবীরা বলছেন, হেরোইনের পরিমাণ ২৫ গ্রামের বেশি হলে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে আইনে। আর এর চেয়ে কম পরিমাণ মাদক পেলে অন্যূন দুই বছর থেকে অনূর্ধ্ব ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031030178070068