এক রাতেই শত বিঘা জমি ধরলায় বিলীন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি |

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পানির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কুড়িগ্রামে হঠাৎ আগ্রাসী হয়ে উঠেছে ধরলা। গত রোববার রাতে উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ধরলার তীব্র ভাঙনে ৫টি বসতভিটাসহ শতাধিক বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, আশ্রয় কেন্দ্র, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভূমি আফিসসহ বসতি ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বলছে, গত রোববার রাতে ধরলা তীরবর্তী বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খুদিরকুটি ব্যাপারিপাড়া গ্রামে ধরলার তীব্র ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনের তীব্রতায় মানুষ রাত জেগে বাড়িঘর সরিয়ে নিতে শুরু করেন। এরই মধ্যে করিম বাদশা, লুৎফর মুন্সি, দেওয়ান আলী, মোহাম্মদ আলী ও রোস্তমের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়। কোনো রকমে তারা ঘরের চালসহ জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে পেরেছেন। এছাড়া এক রাতেই অন্তত একশ’ বিঘা আবাদি জমি, শত শত গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। এখনও ভাঙন হুমকিতে শতাধিক পরিবার ও স্থাপনা। 

ধরলার আকস্মিক ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা দেওয়ান আলী। গত রোববার রাতে ধরলার তীব্র ভাঙনে বসতভিটা হারিয়েছেন এই দিনমজুর। শুধু দেওয়ান আলী নন, তার গ্রামের অনেকের এখন এমন সঙ্গীন অবস্থা।

দেওয়ান আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘অবস্থা খুব খারাপ। সামলায় যায় না। কোনটা ধরি কোনটা সরাই। গাছপালা, খড়ের পালা সউক শ্যাষ। খালি ঘরের চালটা করি সরবার পাছি। কাই কারটা সামলায়! এলা যে কোটাই যায়া থাকমো সেটায় কবার পাই না।’

ভাঙনের শিকার দিনমজুর রোস্তম বলেন, ‘কপাল ভালো টের পাইছি। না হইলে মানুষ সুদ্দোয় নদীত ভাসি গেইলং হয়। কোনো মতে ঘরগুলা সরবার পাছি। কিন্তু এলা কোটাই যায়া কেমন করি বাস করমো সেই কিনারা পাইতেছি না।’

ভাঙন নিয়ে লোকালয়ের দিকে ধীরে অগ্রসর ধরলা। এর বাম তীরের নিকটবর্তী বসতভিটা ও স্থাপনা ভাঙন হুমকিতে দাঁড়িয়ে আছে। গতকাল সোমবার দুপুরে কথা হয় ভাঙনের শিকার আরেক দিনমজুর সামেদ আলীর সাথে। তিনি বলেন, চারটা ঘরের চাল সরে নিয়া স্কুল মাঠত থুচি। ভিটার অর্ধেক গেইছে। 

ধরলার ভাঙনে হুমকিতে আছে ওই ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুদির কুটি আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়, তৎসংলগ্ন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ভূমি অফিস ও ৪ নং ওয়ার্ডের আক্কেল মামুদ কমিউনিটি ক্লিনিক। এছাড়াও আবাদি জমিসহ বিভিন্ন বসতি ভাঙন হুমকিতে রয়েছে।

৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কয়েকদিন ধরে ভাঙন চলছে। গত এক দশ দিনে ওয়ার্ডের স্কুল সংলগ্ন ২৯ টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা এখন আরো বাড়ছে। কিন্তু পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আক্তার হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ধরলার ভাঙনে এক রাতেই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পরিবার ভিটা হারিয়েছে। অনেক আবাদি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে চলে গেছে। আমার নিজের বাড়িও ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে অন্তত ১ হাজার মিটার প্রতিরক্ষা কাজ করা প্রয়োজন। তা না হলে কোনো কিছুই রক্ষা করা যাবে না।

ভাঙনের খবরে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ২ হাজার বস্তা জিও ব্যাগ ফেলার অনুমতি দিয়েছে জানিয়ে এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, জেলা প্রশাসন ও পাউবো থেকে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তারা বলছেন, জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বেগমগঞ্জে ধরলার বাম তীরে প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ জুড়ে ভাঙন রয়েছে। এতো বড় অংশে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজ করার বরাদ্দ নেই। ভাঙনের খবরে আমরা তাৎক্ষণিক ২ হাজার জিও ব্যাগ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছি। স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ স্থাপনাগুলো রক্ষায় আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025429725646973