এক শিফটে অস্তিত্ব সংকট

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব বিপন্ন করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসন আমলে সর্বপ্রথম ঢাকা মহানগরীর প্রাথমিক শিক্ষা তৎকালীন ঢাকা পৌরসভার  কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে সারা দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রাম-সরকারের কাছে ন্যস্ত করা হয়।

তখন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ডাকে ৩ মাস ১০ দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মঘট হয়। ২ লাখ শিক্ষক ও তাঁদের পরিবারের লোকজন ঢাকা শহর অবরোধসহ মহাবিক্ষোভ পালন করেন। কিন্তু, সামরিক সরকার জাতীয় সংসদের দুটি আইন বাতিল করে সরকারি কর্মচারীর মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখে। তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ ইউনুস খানের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এ সমিতির নেতৃত্বে থাকেন ৮১ খ্রিষ্টাব্দের আন্দোলনসহ প্রাথমিক শিক্ষকদের সব অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিরোধিতাকারী আঃ আউয়াল তালুকদার। 
পরবর্তীতে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে সেনাসমর্থিত সরকারের আমলে ব্র্যাকের অধীনে গোটা প্রাথমিক শিক্ষা ন্যস্ত করার আর একটি ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সে সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি ব্রাকের পক্ষে ছিলেন।  

সে আন্দোলনে আমি বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। অতীতের জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের মতো সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারও নতি স্বীকার করে ষড়যন্ত্র থেকে সরে যায়। 

প্রাথমিক শিক্ষকদের সব আন্দোলনে পাশে ছিলেন দৈনিক শিক্ষাডটকমের সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের বার্তার নির্বাহী সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান খান। তিনি তখন ইংরেজি পত্রিকা দি নিউ এইজের শিক্ষা সাংবাদিক ছিলেন। 

এছাড়াও ব্র্যাক আন্দোলনে প্রাথমিক শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি ব্র্যাকের শিক্ষার থলির খবর বা সামর্থ নিয়ে কলাম লিখে প্রাথমিক শিক্ষকসহ সচেতন নাগরিকদের সতর্ক করে দেন। 

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার আদর্শে অবিচল থেকে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। কিন্তু, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যার সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন, এদেশের তৃণমূলের সাধারণ মানুষের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার মহাউদ্যোগের অস্তিত্ব বিলীন করার জন্য একটি মহল আজও ষড়যন্ত্র লিপ্ত।

বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব বিপন্নের ষড়যন্ত্র:
প্রাথমিকের সাবেক সিনিয়র সচিব ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে এক শিফটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেন। এক শিফটের বিদ্যালয়ের কর্মঘণ্টা প্রায় ৭ ঘণ্টা। এতো দীর্ঘসময় শিশু শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, বিনোদনসহ দুপুরের গরম খাবার খাওয়া থেকে বঞ্চিত রাখা জঘন্য নিষ্ঠুরতা ও আমানবিকতা। প্রতিমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকের বিষয়টি আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। দীর্ঘসময় বিদ্যালয়ে অবস্থানের ফলে যথাসময়ে খাবার না খেয়ে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ যে বাধাগ্রস্ত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। 

দীর্ঘ সময়সূচির কারণে হতদরিদ্র অভিভাবক তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা থেকে বিরত থাকেন। বিপরীতে কিন্ডারগার্টেন এবং সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা অধিকতর শিশুবান্ধব। তাই এক শিফটের কার্যক্রম চালু হলে শিক্ষার্থীতে ভরপুর হবে কিন্ডারগার্টেন, সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা। অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার মহাস্বপ্নের জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষা। 

তাই সব শিশুর জন্য স্কুলের সময়সূচি, বই ও মূল্যায়ন অভিন্ন হলেই অধিকতর মঙ্গল। 


লেখক : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005450963973999