একই সরকারি স্কুল চলছে দুই উপজেলায়

মমিনুল ইসলাম বাবু, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি |

কুড়িগ্রামে এক উপজেলার সরকারি বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এতে চরাঞ্চলের তিন শতাধিক শিশুর পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্কুলটিতে ভোট কেন্দ্র থাকায় ভোটারদের কী হবে তা নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা। স্থানীয় সরকারের ভোটের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতেই এমনটি ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।   

সরেজমিনে দেখা গেছে, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসারের মৌখিক নির্দেশে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবনটি উত্তর খাউরিয়ার চর গ্রামের পশ্চিম পাশে স্থানান্তর করেন। এ সময় পার্শ্ববর্তী রৌমারী উপজেলার খেরুয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু বক্কর ছিদ্দিক ও উত্তর খাউরিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লার নেতৃত্বে লোকজন নিয়ে প্রশাসনিক নির্দেশনা অমান্য করে বিদ্যালয়ের ভবনের আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তারা রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী ইউনিয়নের চর খেদাইমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে খেদাইমারী গ্রামে ওই বিদ্যালয় ঘর নির্মাণ করেন। 

এতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুলেখা ইয়াসমিন ও এক সহকারী শিক্ষক উত্তর খাউরিয়া চরেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বিদ্যালয়ের বাকি সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা, লায়লা খাতুন এবং মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে অন্যত্র পাঠদান চলছে। একই বিদ্যালয়ের দুই উপজেলায় দুটি ঘর হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া, ওই বিদ্যালয় ও ভোট কেন্দ্র সরে যাওয়ায় সহস্রাধিক ভোটার পড়েছেন বিপাকে।

উত্তর খাউরিয়ার চরের শিশু শিক্ষার্থী বিজয় শেখ, ছাব্বির ও শিরিনা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা আমাদের গ্রামেই স্কুল চাই। খেদাইমারী গ্রামে স্কুল হলে আমাদের ব্রহ্মপুত্র নদের দুটি শাখা নদী পার হয়ে যেতে হবে। এতে আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। 

একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল মতিন, জোলেখাসহ অনেকেই দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিদ্যালয়টি আমাদের চরে ছিলো। এখানেই পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এটা আমাদের ভোট কেন্দ্র। আমাদের শিশু সন্তানরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্য উপজেলায় গিয়ে কেনো পড়াশোনা করবে? বিদ্যালয়ের তিন সহকারী শিক্ষক তাদের সুবিধার্থে এখানকার বিদ্যালয় অন্যত্র নিয়ে যেতে চাচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়টি ভোট কেন্দ্র হওয়ায় নিজেদের দখলে রাখতে নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান এবং ইউপি সদস্য মইনুল ইসলাম চিলমারী উপজেলার বিদ্যালয়টি রৌমারী এলাকায় নেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। 

 

বিদ্যালয়েরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জুলেখা ইয়াসমিন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, স্কুলটি ভেঙে যাওয়ার পর খাউরিয়া চরের বাসিন্দা মোন্নাফ মিয়ার বাড়িতে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছি। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের তিন সহকারী শিক্ষক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ভাড়াটিয়া লোকবল দিয়ে রৌমারী উপজেলার খেদাইমারী গ্রামে টিনসহ অন্যান্য আসবাবপত্র নিয়ে গেছেন। এই বিষয়ে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। 

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজা আক্তার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। স্কুলটি রৌমারীতে নিয়ে যান তিন সহকারী শিক্ষক। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। আমাদের এলাকার স্কুল আমাদের এখানেই পুনর্নির্মাণ করার দাবি জানাই।

নয়ারহাট ইউনিয়ন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইনসাব আলী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এ বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বললে তিনি আমার সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেছেন। শুধু ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য স্কুলটি অন্য উপজেলায় নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।  

সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিদ্যালয়টি রৌমারী উপজেলার সীমানায় প্রায় ৩৩ বছর থেকে ছিলো। বর্তমান নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ভাই বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করেছেন। 

নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। পরে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেনের অনুরোধে সাময়িকভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়ার জন্য ক্যাচমেন্ট এলাকার মধ্যে একটি ঘর তোলা হয়েছে। পানি কমে গেলে পরে ঐক্যমতের ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি পুনর্নির্মাণ করা হবে।

চিলমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু সালেহ সরকার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সাময়িকভাবে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য অন্য উপজেলায় নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পানি কমে গেলে বিদ্যালয়ের নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে উত্তর খাউরিয়া এলাকাতেই। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এক উপজেলার স্কুল অন্য উপজেলায় নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029799938201904