একজন শিক্ষকের মানবেতর জীবন

লিজা আক্তার |

লেখাটি শুরু করার আগে বলে নিতে চাই-‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ আর এই মেরুদণ্ডকে সোজা করে দাঁড় করানোর মহান দায়িত্বটি গ্রহণ করেন আমাদের শিক্ষক। শিক্ষকের ব্রতই হলো একজন শিক্ষার্থীকে ভালো মানুষ এবং সুশিক্ষিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু হায়! এখন সেই শিক্ষার ধারা কোন দিকে প্রবাহিত হচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না! কিছুটা বিভ্রান্ত, বিরক্তি, উন্নাসিকতা আমাদেরকে ঘিরে ধরেছে। তাই হয়তো আজ শিক্ষকের খবর কেউ রাখছে না। শিক্ষক কি শুধু দায়িত্ব পালন করেই যাবেন, তার প্রতি কি সমাজ বা রাষ্ট্রের কোনো দায়িত্ব নেই?

আমাদের সমাজে শিক্ষকের স্থান ভাবগত দিক থেকে অনেক উপরে হলেও এক স্তরের শিক্ষকের জীবনমান সমাজে বসবাসের জন্য যথোপযুক্ত নয়। আর তারা হলেন বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা সমাজে এমন একটা স্তরে অবস্থান করেন যে চেয়েও খেতে পারেন না আবার মেরেও খেতে পারেন না। পরিবারগুলো যে কী দুর্বিষহ জীবনযাপন করে তা চোখে না দেখলে বা অনুভব না করলে বিশ্বাস করা কঠিন হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুরই বদল হয়, কিন্তু আমরা আমাদের সুবিধা অনুযায়ী শুধু পরিবর্তন আকাঙ্ক্ষা করি। কিন্তু এ বিষয় তো স্পষ্ট যে, যখন পরিবর্তনের ছোঁয়া প্রয়োজন বা আধুনিকায়নের দরকার তখন সেই পরিবর্তন বা আধুনিকায়ন সকল দিক থেকেই শুরু করা আবশ্যক। আমরা শিক্ষার মান বাড়াতে চাই; একটি নতুন, সুন্দর আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই ভালো কথা কিন্তু সেই শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করবে যে শিক্ষকরা তাদের উন্নয়ন কি জরুরী নয়? তাদেরকেও তো নতুনভাবে, সুন্দর করে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজন আছে। 

একটা প্রবাদ আছে- ‘পেটে খিদা মুখে লাজ’ এভাবে চললে তো আসলে হয় না। এ যুগে জড়তা রেখে কোনো লাভ নেই। যার যতো বেশি জড়তা সে ততো বেশি ঠকবে। বর্তমানে একজন বেসরকারি শিক্ষক যে বেতন ভাতা পান তা দিয়ে প্রকৃত অর্থেই এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে বেঁচে থাকা কঠিন।সন্তানের চাহিদা, বাবা-মা’র চাহিদা, নিজের প্রয়োজন কোনো কিছুই তিনি মেটাতে পারছেন না এই স্বল্প বেতনে। তারা বিলাসিতা চান না শুধু সমাজে টিকে থাকার মতো যতোটুকু অর্থ প্রয়োজন সেটুকু হলেই শিক্ষক সন্তুষ্ট।শিক্ষক এসি চান না, গাড়ি চান না, বড় দালান চান না-শুধু চান একটু ভালোভাবে বাঁচতে-এটাই কি তার অপরাধ? 

যদি এটাই তার অপরাধ হয় তাহলে তাকে দণ্ড দিন, শাস্তি দিন তবে হ্যাঁ বিচারকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আপনাকেও ভাবতে হবে আপনি নিজেই যদি শিক্ষক হতেন তবে কী করতেন?

সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন- 
                   ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
                   পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ 

আমাদের বর্তমান মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের মানসিক অবস্থা ঠিক যেন কবি সুকান্তের চরণ দুটির প্রতিফলন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুঃখী মানুষের আর্তনাদ আসলে কারো শুনতে ভালো লাগে না। কিন্তু যারা মানবিক, যাদের হৃদয় আছে তারা দুঃখী মানুষের বেদনায় বেদনার্ত হয়, উচ্ছ্বসিত হয় না। আমরা ভার্চ্যুয়াল জগতে দেখি অনেকে বেদনার্ত মানুষের বেদনায় সহমর্মি হওয়ার পরিবর্তে যেন একটু বেশিই উচ্ছ্বসিত হন। তাইতো বলি ব্যথার বেদন কেবল ব্যথিতই বুঝতে পারে অন্যদের পক্ষে তা বোঝা কিছুটা কষ্টসাধ্যই বটে। 

শিক্ষক সমাজের একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব তাকে কোনো ভাবেই আমরা অবজ্ঞা করতে পারি না সেটা হোক কথায় কিংবা কাজে।কারণ, আমরা যারা সমাজের উচ্চাসনে বসে আছি তাদের প্রত্যেকের জীবনের সফলতার পেছনে কোনো না কোনো শিক্ষকের ভূমিকা অবশ্যই রয়েছে। শিক্ষকরা খুব বেশি কিছু চান না শুধু সম্মান নিয়ে, পরিবার নিয়ে বাঁচতে চায়।

তাই আসুন আমরা সবাই শিক্ষকদের মানোন্নয়নে ঐক্যমত পোষণ করি। কোনো যুক্তি তর্ক বা গবেষণায় না গিয়ে তাদের প্রতি মানবিক হই। তারাও যেন সমাজে নিজেদেরকে ভালো অবস্থানে রেখে সুস্থ ও সুন্দর মন নিয়ে শিক্ষার্থীদের জীবন গড়ে তোলার মহান ব্রত পালন করতে পারেন সেই প্রত্যাশা রইল।

লেখক: সহকারী শিক্ষক (বাংলা), খিলা উচ্চ বিদ্যালয়, আটপাড়া, নেত্রকোণা

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই - dainik shiksha এবারও ভারতে ছাপা হবে ১ কোটি পাঠ্যবই ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য - dainik shiksha ইউজিসিতে দুইজন নতুন সদস্য বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান - dainik shiksha বুয়েটের নতুন ভিসি অধ্যাপক বদরুজ্জামান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম - dainik shiksha উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি ওবায়দুল ইসলাম ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের - dainik shiksha ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে না দেয়ার হুঁশিয়ারি বদলি প্রত্যাশীদের নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে - dainik shiksha ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যা যা করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নতুন ডিজি আব্দুল হাকিম কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050411224365234