একবছরে ২৫ লাখ বৃক্ষ নিধন! সবার ওপরে বন বিভাগ!!

জাকারিয়া মন্ডল, আমাদের বার্তা |

জাকারিয়া মন্ডল, আমাদের বার্তা: দেশজুড়ে গত একবছরে প্রায় ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৬৫টি গাছ কাটা হয়েছে। বৃক্ষনিধনের এই মচ্ছবে সবার ওপরে আছে চট্টগ্রাম জেলা। এ জেলায় ৫ লাখ ৬ হাজার ২২২টি গাছ কেটে ফেলার ঘটনা নথিভুক্ত করা গেছে। তার মানে, গত এক বছরে সারা দেশে যতো গাছ নিধন হয়েছে তার প্রায় অর্ধেকই কাটা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়। সবচেয়ে বেশী গাছ কেটেছে বনবিভাগ। তবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মিলিতভাবে বন বিভাগকে অতিক্রম করেছে। আর একক বৃক্ষনিধনকারী হিসেবে সবার উপরে আছে নীলফামারীর তিস্তা সেচ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রায় চার লাখ গাছ কাটা হয়েছে। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় গত এক বছরে কাটা পড়েছে ১ হাজার ৮১টি গাছ।

আজ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রস্তুত করা রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) মিডিয়া মনিটরিং রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাস থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ পর্যন্ত তথ্য নিয়ে এই রিপোর্টটি প্রস্তুত করা হয়। তবে আরডিআরসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, এই হিসাব কেবল জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত বড় গাছ কাটার। মাঝারি গুল্ম ও ছোট গাছের হিসাব ধরলে গত এক বছরে বাংলাদেশে মোট নিধনকৃত গাছের সংখ্যা এর অন্তত দ্বিগুণেরও বেশি হবে।   

প্রকাশিত রিপোর্টের পর‌্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, গাছপালা কাটার পেছনে উন্নয়ন প্রকল্প অনেক বেশি দায়ী। তিস্তা সেচ প্রকল্প ছাড়াও নগর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অনেক গাছ কাটা হয়েছে। আবার ইকো-ট্যুরিজমের নামেও নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করা হয়েছে।

ঢাকার ধানমন্ডিতে পাঁচ শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে সড়কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বাড়াতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও কাটা হয়েছে পাঁচ শতাধিক গাছ।  

রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম জেলায় ৫ লাখ ৬ হাজার ২২২টি গাছ কেটে ফেলার ঘটনা নথিভুক্ত করা হলেও প্রকৃতপক্ষে বৃক্ষ নিধনের সংখ্যা ঢের বেশি। কেবল লোহাগড়া ও মহেশখালীর সংরক্ষিত প্যারাবনে ৭ লাখেরও বেশি গাছ কেটেছে বন বিভাগসহ স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইত্যাদি সংস্থা ও বিভাগ। প্রায়শই স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই মচ্ছবে যোগ দিয়েছে।

রিপোর্টের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, গাছপালা অক্সিজেন দেয়, বিপরীতে কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে মানুষকে বাঁচতে সহায়তা করে। পাশাপাশি গাছ ছায়া দেয়, চারপাশকে শীতল করে, শহুরে তাপ প্রভাব হ্রাস করে।  গাছপালা বন্যা ও ঝড়ের বিরুদ্ধেও প্রাকৃতিক বাধা হিসাবে কাজ করে। বন্যপ্রাণী বনের খাদ্যেই বাঁচে। এছাড়াও গাছ বৃষ্টির পানি মাটিতে অনুপ্রবেশে সহায়তা করে এবং মাটির ক্ষয় হ্রাস করে, যা কৃষি উত্পাদনশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু নির্বিচারে বৃক্ষনিধন আমাদের অস্তিত্বকে হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের অবনতির ক্ষতিকর প্রভাব ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। গাছ কাটার কারণে যার মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে আরও বেড়েছে। এই ঘটনা জীববৈচিত্র্য, জলবায়ুর স্থিতিশীলতা ও জনস্বাথ্যের উপর মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে। মরুকরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে বন সংরক্ষণের জন্য আইনের প্রয়োগ অনেক দুর্বল হওয়ায় নির্বিচারে গাছ কাটার প্রেক্ষিত তৈরি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৃক্ষ নিধন থামাতে উপযুক্ত আইন প্রণয়য়ন ও প্রয়োগের পাশাপাশি নীতিনির্ধারক, স্টেকহোল্ডার ও সাধারণ জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056159496307373