একযুগ যাবত এনসিটিবিতে শিক্ষা ক্যাডারের যেসব কর্মকর্তা

নিজামুল হক |

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) হিসাবে অধ্যাপক ড. মিয়া ইনামুল হক সিদ্দিকী ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ৩ মার্চ প্রেষণে যোগদান করেন। এর তিন বছর পর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের একই দিনে তিনি বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন। তিনি জানান, ‘তিন বছর পর বদলির নিয়ম রয়েছে। আমার তিন বছর পূর্তির বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি, যাতে অন্যত্র পদায়ন করা হয়।’

অথচ এই প্রতিষ্ঠানের এমন অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা বদলি না হয়ে টানা এক যুগ পার করেছেন। বদলি করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হলে তদ্বির করে তা থামিয়ে দেন। তদ্বিরের জন্য মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। মূলত বদলি না হয়ে ঢাকায় থাকার জন্যই এই সিন্ডিকেট কাজ করে। তাছাড়া এ প্রতিষ্ঠানে থাকলে বাড়তি আর্থিক সুবিধাতো রয়েছেই। এই ধরণের কর্মকর্তারা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে আগ্রহী নন।

তথ্য অধিকার আইনের আলোকে এনসিটিবি থেকে সরবরাহ করা নথিতে দেখা যায়, এই প্রতিষ্ঠানে ৬১ জন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন কর্মকর্তা এক যুগের বেশি সময় পার করেছেন। এছাড়া অর্ধযুগের বেশি সময় কাটিয়েছেন এমন কর্মকর্তার সংখ্যা অন্তত ১২ জন। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মূল চাকরি কলেজের শিক্ষক হিসাবে। তারা এনসিটিবিতে প্রেষণে বদলি হয়ে আসেন।

সাহানা আহমেদ। উদ্ভিদ বিদ্যা বিষয়ের অধ্যাপক। এনসিটিবিতে তার পদ গবেষণা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক)। প্রেষণে যোদগান করেন ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুন। সে হিসাবে এই কর্মকর্তা প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন। অধ্যাপক জারিয়া তুল হাফসা যোগদান করেন ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০ জুন। তিনিও যুগের বেশি সময় ধরে আছেন। শাহ তাসলিমা সুলতানা। সহকারী অধ্যাপক। তিনি এ প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক স্তুরের গবেষণা কর্মকর্তা হিসাবে রয়েছেন। তিনি এনসিটিবিতে যোগদান করেছেন ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ মার্চ। সে হিসাবে এই কর্মকর্তাও প্রায় এক যুগ রয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানে।

উর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী যোগদান করেন ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর (প্রায় ১০ বছর), উর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ চৌধুরী মুসাররাত হোসেন জুবেরী ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ১৬ নভেম্বর (প্রায় ৯ বছর)। উর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আলেয়া আক্তার ২০০৭  খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল (প্রায় ১১ বছর), অধ্যাপক মো ফরহাদুল ইসলাম ২০০৮  খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে যোগদান করে টানা ১০ বছর রয়েছেন। অধ্যাপক হাসমত মনোয়ার প্রাথমিক স্তুরের বিশেষজ্ঞ । তিনি এখানে যোগদান করেছেন ২০০৬ সালের ১৪ মার্চ ( প্রায় ১ যুগ)। বিশেষজ্ঞ প্রাথমিক খ: মো মঞ্জুরুল আলম ২০১০  খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি ( প্রায় ৮ বছর), বিশেষজ্ঞ প্রাথমিক মো. মোস্তফা সাইফুল আলম ২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর ( প্রায় ৮ বছর), সম্পাদক (মাধ্যমিক) নূর মোহাম্মদ ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর ( প্রায় ৮ বছর), গবেষণা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক) কানিজ ফৌজিয়া খানম ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ নভেম্বর (প্রায় ৮ বছর), গবেষণা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল (প্রায় ৬ বছর)। গবেষণা কর্মকর্তা (প্রাথমিক আবু সালেক খান) ২০১১  খ্রিস্টাব্দের ১৪ মার্চ যোগদান করেন। তিনি প্রায় ৭ বছর ধরে রয়েছেন এনসিটিবিতে। অথচ এসব কর্মকর্তাদের তিন বছর পর এ প্রতিষ্ঠান থেকে বদলি হয়ে যাওয়ার কথা।

শিক্ষা ক্যাডারের শীর্ষ পদ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, সরকারি চাকরিতে তিন বছর পর বদলির নিয়ম রয়েছে। বদলি না হয়ে একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে থাকাটা খারাপ অভ্যাস। নতুন মন্ত্রী যোগদান করেছেন। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করব। সমস্যাগুলো তুলে ধরব। তিনি বলেন, অনেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাকরি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। আর কেউ ঢাকায় থাকছেন দীর্ঘদিন ধরে। এটা বৈষম্য।

আছে ৭টি বোনাস : এনসিটিবির কর্মকর্তা বছরে ৭ ধরণের বোনাস পান। এর মধ্যে দুইটি ঈদ বোনাস ছাড়াও সম্মানী প্রাথমিক স্তর, সম্মানী ইবতেদায়ি স্তর, সম্মানী মাধ্যমিক স্তর ১, সম্মানী মাধ্যমিক স্তর ২ এবং বিশেষ সম্মানী।

এনসিটিবিতে থেকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী একজন উর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞকে বছরে দুই ঈদ বোনাস ছাড়াও প্রাথমিক স্তরের সম্মানী ৬০ হাজার ৮৪০, ইবতেদায়ি স্তরের সম্মানী ৬০ হাজার ৮৪০, মাধ্যমিক স্তর ১ এর সম্মানী ৬৩ হাজার ২৮০, মাধ্যমিক স্তর ২ এর সম্মানী ৬০ হাজার ২৮০ এবং বিশেষ সম্মানী ৬০ হাজার ৮৪০ টাকা দেয়া হয়। প্রায় সব কর্মকর্তারাই দুটি ঈদ উত্সব ছাড়াও কমবেশি এ ধরণের ৫টি বোনাস পেয়ে থাকেন।

সূত্র: ্ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050830841064453