পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মো. রেজাউল হক। একই ব্যক্তি ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়েরও রেজিস্ট্রার। লিয়েনে রেজিস্ট্রার হিসেবে এক বছরের দায়িত্ব পালন শেষে পুনরায় নিয়োগ পেয়েছেন দুই বছরের জন্য। কিন্তু যে পদ্ধতিতে তিনি নিয়োগ পেয়েছেন সেটি সরকারি চাকরি নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন। নিয়ম অনুযায়ী এক বছরের বেশি কেউ লিয়েন পেতে পারেন না। রেজাউল হকও পুনরায় লিয়েনের আবেদন করে পাননি। দ্বিতীয়বার আবেদন করে নিয়েছেন তিন মাসের অসাধারণ ছুটি। অসাধারণ ছুটি নিয়ে কারও অন্য কোথাও চাকরি করার সুযোগ নেই। অসাধারণ ছুটি দেয়া হয় কেবল অসুস্থতাজনিত কারণে।
কিন্তু রেজাউল অসাধারণ ছুটি নিয়ে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হিসেবে পুনরায় দুই বছরের জন্য যোগ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, অসাধারণ ছুটি নিয়ে কেউ অন্য কোথাও চাকরি করতে পারেন না। যদি করে থাকেন সেটি আইনের লঙ্ঘন হবে। আর পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, অসাধারণ ছুটি নিয়ে অন্য কোথাও চাকরি করে থাকলে রিজেন্ট বোর্ড ব্যবস্থা নেবে।
রেজাউলের নিয়োগের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পেতে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) বরাবর একটি আবেদন করেন মো. রেজাউল হক। আবেদনের প্রেক্ষিতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ১৫ ডিসেম্বর পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর এক চিঠিতে রেজাউল হককে এক বছরের লিয়েন ছুটি দেয়ার অনুরোধ করেন। ভিসির অনুরোধের ভিত্তিতে ১৯ ডিসেম্বর পাবনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রেজাউলের এক বছরের লিয়েন ছুটি মঞ্জুর করে। লিয়েন ছুটি পাওয়ার পর রেজাউল হক ২০ ডিসেম্বর ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের জন্য ফের আবেদন করেন। ২১ ডিসেম্বর আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রেজাউল হককে সাত শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেন। ওই দিনই রেজাউল দপ্তরে যোগ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০ ডিসেম্বর ২০২২ তার লিয়েন ছুটি শেষ হয়। এর আগে ৭ ডিসেম্বর ২০২২ রেজাউল হক ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে একটি চিঠি পান। যেখানে তার লিয়েন নিয়োগ আরও দুই বছর বাড়ানোর কথা জানানো হয়।
১০ ডিসেম্বর ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আহসান উল্লাহ পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে এক চিঠিতে রেজাউলকে আরও দুই বছরের লিয়েনের অনুমোদন দেয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১২ ডিসেম্বর এক চিঠিতে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে জানায়, ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ছুটির নীতিমালা অনুযায়ী মো. রেজাউল হকের লিয়েন ছুটি বর্ধিত করার কোনো সুযোগ নেই। আর এ বিষয়ে পরবর্তী রিজেন্ট বোর্ডের সিদ্ধান্ত আপনাকে অবহিত করা হবে।’ এরপর ১৭ ডিসেম্বর মো. রেজাউল হক পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আবেদন পাঠান। যেখানে তিনি ছুটি বৃদ্ধি সহ চাকরির অনুমতি দেয়ার আবেদন করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৮ ডিসেম্বর পাবনা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে বিনা বেতনে তিন মাসের ছুটি অনুমোদনের কথা জানায়। যেখানে বলা হয়, ‘আপনাকে ২১ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের বিনা বেতনে অসাধারণ ছুটি মঞ্জুর করা হলো।’ রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্মর স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে রেজাউলকে চাকরি করার কোনো অনুমতি দেয়নি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর ২০ ডিসেম্বর মো. রেজাউল হক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর রেজিস্ট্রার পদে যোগদান প্রসঙ্গে লিখেন, ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ছুটির নীতিমালায় লিয়েন এক বছরের বেশি বর্ধিত করার সুযোগ নেই। কিন্তু সরকারি কর্মচারী লিয়েন বিধিমালা-২০২১ অনুমোদনের জন্য প্রস্তুাব করা হয়েছে যা পরবর্তী রিজেন্ট বোর্ডে উপস্থাপন করা হবে। উক্ত বিধিমালা রিজেন্ট বোর্ডে অনুমোদিত হলে আমার লিয়েন ছুটি বর্ধিতকরণের পত্র পরবর্তীতে দাখিল করা হবে। উক্ত লিয়েন মঞ্জুর বিলম্ব হওয়ায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ থেকে ২০ মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত তিন মাসের জন্য বিনা বেতনে অসাধারণ ছুটি মঞ্জুর করেছেন।’
অসাধারণ ছুটি নিয়ে কীভাবে একজন ব্যক্তি আরেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) প্রফেসর ড. হাজিফা খাতুন বলেন, আমি ফোনে এ বিষয়ে কথা বলতে পারবো না। এটা অফিসিয়াল ইস্যু। আপনাকে অফিসে আসতে হবে। তখন আমি কথা বলবো।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, আমরা তাকে অসাধারণ ছুটি দিয়েছি। কিন্তু সেই ছুটি নিয়ে তিনি কী করছেন তা তো আমরা জানি না। এটি যেখানে যোগ দিয়েছেন তাদের বিষয়। পাবিপ্রবির আইনও তো লঙ্ঘন হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিজন কুমার বলেন, সেই বিষয়ে রিজেন্ট বোর্ড পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. রেজাউল হকের বক্তব্য জানতে চাইলে যারা নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।
নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, রেজাউলকে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুই বছরের জন্য পুনরায় রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার আগে তাকে পাবিপ্রবি থেকে লিয়েন ছুটি নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু ওখানে রিজেন্ট বোর্ডের মিটিং হতে বিলম্ব হওয়ায় তিনি তিন মাসের অসাধারণ ছুটি নিয়ে আমাদের এখানে যোগ দেন। আমরা অসাধারণ ছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অসাধারণ ছুটি নিয়ে চাকরি করার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু ইউজিসি যদি এ বিষয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেয় তাহলে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, কেউ অসাধারণ ছুটি নিয়ে অন্য কোথাও চাকরি করতে পারেন না। এটার সুযোগ নেই। যদি কেউ করে থাকেন কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান এমন কাউকে নিয়োগ দিয়ে থাকে তাহলে সেটি আইনের লঙ্ঘন করেছেন।