সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। কেবল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে নয় বরং সব প্রকার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তারা।
বুধবার (১০ জুলাই) দুপুর ১টায় এই মহাসড়কের চৌদ্দপাই এলাকায় অবস্থিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হাউজিং সোসাইটি (বিহাস) বাইপাস মোড় অবরোধ করেন তারা। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৩টা) বিহাস মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিভিন্ন হল ও ছাত্রাবাস থেকে জাতীয় পতাকা, কোটা বিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। জড়ো হওয়ার পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। সেখানে সোয়া ১২টার দিকে মিছিলসহ যোগ দেন রুয়েটের অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী। এরপর সাড়ে ১২টায় প্রধান ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চৌদ্দপাই এলাকার বিহাস বাইপাস মোড়ের দিকে রওনা হন তারা। প্রায় ১৫ মিনিট মধ্যে বিহাস মোড়ে পৌঁছানোর পর সেখানে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এতে এই বাইপাস রোড দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সব প্রকার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বাইপাস মোড়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘১৮ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ ছাড়া কর্মসূচিতে বিসিএস পরীক্ষা এবং পিএসসি’র প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রতীকী ক্লাসেরও আয়োজন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
জানতে চাইলে রাবির কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আমানুল্লাহ খান বলেন, শিক্ষার্থী সমাজের সব প্রকার চাকরিতে কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিটি মেনে নির্বাহী বিভাগকে দায়িত্ব নিয়ে নতুন পরিপত্র জারির মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের পথ দেখাতে হবে। যাতে আবারও আইনি জটিলতা তৈরি না হয় এবং শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।[inside-ad-1
উল্লেখ্য, সারাদেশের মতো কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ৬ জুন থেকে আন্দোলন করে আসছেন রাবি শিক্ষার্থীরা। এর আগে ৪ ও ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন তারা। পরে গত ৮ জুলাই রাজশাহী-ঢাকা রেলপথও অবরোধ করেন। এ ছাড়া প্রতিদিনই তারা বিভিন্নভাবে কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।
সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। এই আদেশের ফলে সব কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮খ্রিষ্টাব্দে সরকারের জারি করা পরিপত্র আপাতত বহাল থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটার বিরোধিতায় আন্দোলনের মধ্যে বুধবার (১০ জুলাই) সব পক্ষকে চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, কোটা নিয়ে এখন কোনও কথা বলা যাবে না। হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল বিভাগ আবার বিষয়টি শুনবে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৭ অগাস্ট।]
এই বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন পরে বলেন, আপিল বিভাগ সাবজেক্ট ম্যাটারে স্থিতাবস্থা জারি করেছে। ফলে হাই কোর্টের রায়ের আগে যেমন ছিল, সব তেমন থাকবে। তার আগে কোটা বাতিল-সংক্রান্ত ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে পরিপত্র কার্যকর ছিল, সেটা থাকবে।
তবে এই আদেশের পরও শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরবে না বলে জানিয়েছেন। কোটা পূর্ণভাবে সংস্কার হলেই কেবল তারা ঘরে ফিরবেন।