একাদশ-আলিমে শিক্ষার্থী কমায় ফাঁকা থাকবে প্রায় ১২ লাখ আসন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কলেজে একাদশ শ্রেণী ও মাদ্রাসার আলিম স্তরে এবার প্রায় ১২ লাখ আসন ফাঁকা থাকছে। এতে ‘বিপুল সংখ্যক’ কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সংকটে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। শুধুমাত্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজগুলোতেও এক লাখের বেশি আসন ফাঁকা থাকতে পারে বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাকিব উদ্দিন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ ডিসেম্বর ছিল একাদশ শ্রেণী ও সমস্তরে অনলাইনে ভর্তির আবেদনের শেষ সময়। এই সময়ে ভর্তির জন্য অনলাইনে মোট ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৪৬ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে।

আর এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। এ হিসাবে তিন লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৩ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেনি।

সারাদেশে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমস্তরের মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণীতে মোট ভর্তিযোগ্য আসনের সংখ্যা ২৫ লাখ ৫৪ হাজারের মতো। এ হিসাবে কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে ১২ লাখ আট হাজারের মতো আসন ফাঁকা থাকবে বলে শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বলেন, ‘ভর্তির প্রথম পর্যায়ের আবেদন শেষ হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর এর ফল প্রকাশ। এরপর ১ থেকে ৮ জানুয়ারি ভর্তির নিশ্চায়ন করতে হবে।’

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ১৭ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ভর্তির জন্য আবেদন করেছে জানিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাকি শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন করতে পারে, আরেকটি একটি অংশ কারিগরিতে চলে যাবে; আবার অনেকে ভর্তিই হবে না। এর ফলে কলেজের অনেক আসন খালি থাকবে। যা প্রতিবছরই হয়।’

২০২১ সালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছিল। এ হিসাবে এবার এমনিতেই কম উত্তীর্ণ হয়েছে সাড়ে তিন লাখের বেশি শিক্ষার্থী। এরপরও এবার কলেজগুলোতে ‘অসংখ্য’ আসন ফাঁকা রয়েছে বলে জানান তপন কুমার সরকার।

বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপের আবেদন ৯ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত নেয়া হবে। এ ধাপের ফল ১২ জানুয়ারি প্রকাশ করা হবে। নিশ্চয়ন চলবে ১৩ থেকে ১৪ জানুয়ারি। আর তৃতীয় ধাপের আবেদন ১৬ জানুয়ারি ও ফল প্রকাশ ১৮ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ধাপের নিশ্চয়ন করা যাবে ১৯ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। যারা ভর্তির জন্য নির্বাচিত হবে তাদের ২২ থেকে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে ভর্তি হতে হবে। ক্লাস শুরু হবে ১ ফেব্রুয়ারি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুরুল কবির বুধবার জানান, সারাদেশের কলেজ ও মাদ্রাসায় ‘বিপুল সংখ্যক’ আসন শূন্য থাকবে। তবে রাজধানীর ঢাকা কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজসহ এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে আবেদন বেশি পড়ছে।

কতটি কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সংকটে পড়তে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনই এই সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তবে একাদশ শ্রেণীতে পাঠদানের অনুমোদন দেয়ার সময় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ৫০টি আসনের অনুমোদন দেয়া হয়। আবার অনেক কলেজ বোর্ড থেকে বেশি আসনের অনুমোদন নিয়ে থাকে।’ অনুমোদিত অনেক মাদ্রাসা ন্যূনতম শিক্ষার্থী পায় না বলে জানান মঞ্জুরুল কবির।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবার এ বোর্ডের অধীনে এক হাজার ৫৪টি সরকারি-বেসরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে মোট পাঁচ লাখ ২১ হাজারের মতো আসন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে এবার মোট চার লাখ চার হাজারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেছে বলে জানান মঞ্জুরুল কবির। এ হিসাবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কলেজগুলোতে এক লাখের বেশি আসন শূন্য থাকবে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের কাছে ‘আকর্ষণীয়’ বা ভর্তির জন্য ‘বেশি’ আবেদন পড়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এমন কলেজের সংখ্যা ২০টির মতো। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার করে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। ২০টি প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগ মিলে প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। এর বিপরীতে এবার ঢাকা বোর্ডেই এসএসসিতে সর্বোচ্চ ফল অর্থাৎ ‘জিপিএ-৫’ পেয়েছে ৬৪ হাজার ৯৮৪ জন শিক্ষার্থী। এ হিসেবে সর্বোচ্চ ফল অর্জন করেও প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সারাদেশের ৫৬৫টি সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি নেয়া হয়। পলিটেকনিকে দুই লাখ ৪৩ হাজারের মতো।

এছাড়া সাতটি ডিপ্লোমা ইন কমার্স প্রতিষ্ঠান ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রায় ১৮শ প্রতিষ্ঠানে এইচএসসিতে (ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি) শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় নয় লাখ আসন রয়েছে।

কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোও এবার আসন সংকটে পড়বে। কারণ কারিগরিতেও মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর তুলনায় অন্তত ছয়গুণ বেশি আসন রয়েছে।

গত ২৮ নভেম্বর এবারের এসএসসি, মাদ্রাসার দাখিল ও কারিগরির এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৫৭১ জন উত্তীর্ণ হয়েছে।

আর মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষায় মোট দুই লাখ ১৩ হাজার ৮৮৩ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় এক লাখ ৩০ হাজার ১৬৫ জন পাস করেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য - dainik shiksha ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত - dainik shiksha উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005652904510498