বর্তমান শিক্ষা বছরের ২১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো আমতলী উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সরকারি পাঠ্য বই পায়নি। করোনার সময়ে লেখাপড়ায় পিছিয়ে থাকলেও বই না পাওয়ায় উপজেলার ২৩ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী আরও পিছিয়ে পড়ার শঙ্কায় করছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত বই পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক ৪৬ টি বিদ্যালয় এবং ২৯ টি দাখিল মাদরাসা রয়েছে। ওই বিদ্যালয়গুলোতে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে ১৫ হাজার ৩০০ এবং মাদরাসায় ৮ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। ওই সব স্কুল শিক্ষার্থীদের মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান শাখায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ বই এবং মাদরাসার শিক্ষার্থীদের ১ লাখ ২১ হাজার ৮০০ বইয়ের চাহিদা রয়েছে। গত ১ জানুয়ারি অনানুষ্ঠানিক বই উৎসবে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে সব বিষয়ের বই বই তুলে দেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।
কিন্তু গত ২১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সপ্তম, অষ্টম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ বিশ্বপরিচয় এবং নবম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজী ও গণিত বই ছাড়া অন্য কোন পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারেনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। এদিকে মাদরাসায় চাহিদার বিপরীতে মাত্র ১১ হাজার ৫০০ বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১ লাখ ১১ হাজার ৩০০ বই না আসায় মাদরাসার তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বই পায়নি।
বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পরেছে। স্কুল ও মাদরাসা বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা বাড়ীতে বই পড়তে পারছে না। করোনার সময়ে লেখাপড়ায় পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে বই না পাওয়ায় উপজেলায় ২৩ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়ায় আরও পিছিয়ে পড়ার শঙ্কায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরা দ্রুত সরকারের কাছে বই পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আমতলী এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিয়ন্তি, মণিষা, অভিষেক ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেফায়েত, সাওদাসিফা ও রিপা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও বাংলাদেশ বিশ্বপরিচয় বই পেয়েছি। আর কোন বই পায়নি। বই না পাওয়ায় আমরা লেখাপাড়ায় পিছিয়ে যাচ্ছি। দ্রুত বই দেওয়ার দাবি জানান তারা।
তারিকাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. বায়েজিদ ও চাঁদনি আক্তার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন বাংলা, ইংরেজি ও গনিত বই পেয়েছি মাত্র। বিজ্ঞান শাখার বই না পাওয়ায় আমরা পড়তে পারছি না। দ্রুত বই পাওয়ার দাবি জানাই।
মহিষডাঙ্গা শামিম আহসান দাখিল মাদরাসার সুপার মো. আনোয়ার হোসাইন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সপ্তম,অষ্টম ও নবম শ্রেণির কোন বই এখনো পাইনি। কখন পাবো তাও নিশ্চিত না। বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে।
কুকুয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ছয়খানা করে বই পেয়েছি। কিন্তু নবম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত ছাড়া আর কোন বই পাইনি।
চিলা হাসেম বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু অন্য শ্রেণির আংশিক বই পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞানসহ অন্য শাখার কোন বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া পিছিয়ে পড়ছে।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জিয়াউল হক মিলন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির সব এবং সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির আংশিক পাঠ্য বই পেয়েছি। ওই বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মাদরাসায় মাত্র ১১ হাজার ৫০০ বই পেয়েছি। চাহিদা অনুযায়ী বই এখনো পাইনি। তবে অল্প দিনের মধ্য পেয়ে যাব। বই পাওয়া মাত্রই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। বছরের শুরুতে লেখাপড়ায় কিছুটা খাটতি হলেও শিক্ষার্থীরা তা কাটিয়ে উঠতে পারবে। তেমন সমস্যা হবে না।