নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের চতুর্থ তলায় ঢুকতেই ডানে চোখে পড়বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত পোস্টার, বামে জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্কেলড রেপ্লিকা। খানিকটা এগোতেই নজর কাড়বে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গফুটজুড়ে অবস্থিত 'বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নারটি’ এনএসইউ শিক্ষার্থীদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রে। যেখানে আছে বঙ্গবন্ধু, ইতিহাস এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা দুই হাজারেরও বেশি বই, ১৯৫২ থেকে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ফটোগ্রাফিক ইভেন্ট, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের সংবাদপত্রের পুনঃমুদ্রণ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণার সবধরনের সুবিধা। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সব শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য যা উন্মুক্ত।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং তাঁর জীবন ও কর্মের কথা তুলে ধরতে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মার্চ 'বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার' প্রতিষ্ঠা করে। এই কর্নারটি শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও অভ্যুদয়ের প্রামাণ্য দলিল হিসেবেই নয়, বরং একটি আর্কাইভ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
এ বিষয়ে এনএসইউর লাইব্রেরিয়ান ড. মো: জাহিদ হোসেন শোয়েব বলেন, বর্তমান প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম, দর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে তথ্য সমৃদ্ধ করা এবং গবেষণায় সহায়তা করাই এই কর্নারটির মূল উদ্দেশ্য। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা বই, আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র, সংবাদপত্রের অংশ- এক জায়গায় সবকিছু পাওয়ায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা উপকৃত হচ্ছেন। তাদের সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে কোন ধরনের নতুন প্রকাশনাই এই কর্নারে রাখা হয়।
কর্নারটিতে দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য ৪৭ জন লেখক ও রাজনীতিবিদদের লেখা নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ নামে বইটি ছাড়াও রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দেশ ও বিদেশে প্রকাশিত পাঁচশোরও বেশি বই। এসব বই এখানে বসে পড়ার পাশাপাশি লাইব্রেরির বাইরে নিয়ে পড়ার সুবিধাও আছে। এছাড়া একপাশের দেয়ালজুড়ে সাদাকালো ফ্রেমে আলো-ছায়ার মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সব বিরল মূহুর্তকে। মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি আলোকচিত্রে ফুটে উঠেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম থেকে মৃত্যু, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও ব্যক্তি জীবন ইত্যাদি বিষয়।
কর্নারটির দায়িত্বে থাকা লাইব্রেরির সহকারী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, আমাদের প্রজন্মের অনেকেই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানতে পেরেছে। কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এই ঘটনাগুলো সঠিকভাবে তুলে ধরতে ইতিহাস সংরক্ষণের বিকল্প নেই।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির 'বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার' ঘুরে অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ। সুন্দর পরিবেশে ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করে ভবিষ্যতে এই কর্নার আরো উন্নত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থীরাও ক্লাসের ফাঁকে অবসর সময়টাতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পেরে উচ্ছ্বসিত। এনএসইউর বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী কৌশিক পোদ্দার বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধুর যে অবদান, তা জানার আগ্রহ ছিল। বই পড়ে, প্রামাণ্যচিত্র দেখে এই বিষয়ে অনেকটা জানতে পারছি। ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলো খুব সহজে জানতে পেরে ভাল লাগছে।
বিবিএর আরেক শিক্ষার্থী আকাশ মিত্র মনে করেন, স্কুল-কলেজে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ক্ষুদ্র পরিসরে জেনেছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন উদ্যোগের কারণে এ বিষয়ে আরো বেশি জানার সুযোগ পাচ্ছেন তারা।
'বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার' থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশের জন্মের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে একটি বিস্তৃত ধারণা লাভ করছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য মডেল হিসেবে এই কর্নার তার সম্পদের মাধ্যমে ইতিহাস ও বর্তমান প্রজন্মের মধ্যকার ব্যবধান পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।