দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু এমপির বিরুদ্ধে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। আমুর আসনভুক্ত (ঝালকাঠি-২) নলছিটি ও সদর উপজেলায় তিনি দু’জন প্রার্থীকে সমর্থন করে জয়ী করতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ অন্য প্রার্থীদের।
অভিযোগকারীরা বলছেন, স্থানীয় নেতাদের ডেকে সমর্থন করা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। অন্য প্রার্থীদের সমর্থনকারী নেতাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারসহ নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে ঝালকাঠি সদরে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তবে নলছিটির দুই প্রার্থী গত সোমবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) লিখিত অভিযোগ করেছেন। চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জি কে মোস্তাফিজুর রহমান ও সালাউদ্দিন খান সেলিম ইসিতে অভিযোগ দিয়েছেন আমু ও তাঁর ভায়রা ফখরুল মজিদ মাহমুদ কিরণের বিরুদ্ধে। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সহোদর ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কিরণ। নির্বাচন প্রভাবিত করার জন্য আমু ও কিরণ গত ২৭ এপ্রিল থেকে ঝালকাঠিতে অবস্থান করছেন বলে অভিযোগ দুই প্রার্থীর। ঝালকাঠি সদর ও নলছিটিতে আগামী ২১ মে ভোট হবে।
স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, চেয়ারম্যান পদে নলছিটিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি তসলিম উদ্দিন চৌধুরী ও সদরে বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খানকে সমর্থন দিয়েছেন আমু। দু’জনের জয় নিশ্চিত করতে আড়ালে থেকে তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
আমু অনুসারী কয়েকজন নেতা অতি উৎসাহী হয়ে ভোটের সভায় হুমকিধমকিও দিচ্ছেন। সম্প্রতি নলছিটির মোল্লারহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কবির হোসেন হাওলাদার নাচনমহল ইউনিয়নে নির্বাচন নিয়ে ঘরোয়া বৈঠকে বলেন, ‘আমু ভাই ২৮ জানুয়ারি আমাগো ডেকে বলছেন, তোমরা তসলিম চৌধুরীকে নিয়ে নামো। আমার সময় অইলে আমি যাব। আমু ভাই অনেকেরে অনেক কিছু বলেন না, ইশারা-ইঙ্গিতে বলেন। এরপর যদি তাঁর কথা না শোনে, ক্যামনে শোনাতে হয়, তা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দেখছি।’ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ইঙ্গিত করে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমু ভাইয়ের প্রার্থী জেতাতে গড়া (বেড়া) দিয়ে দেবেন। যাতে অন্য প্রার্থী আসতে না পারেন। গত সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রগুলোতে আমু যে সংখ্যক ভোট পেয়েছেন, সেই সংখ্যক ভোট তাঁর প্রার্থীকে দিতে হবে।’
জানা গেছে, আমু সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় এ পর্যন্ত বহিষ্কার হয়েছেন ছাত্রলীগের নলছিটির মোল্লারহাট ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন খসরু, সদরের পোনাবালিয়া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাকিউর রহমান শাকিল ও শেখেরহাট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক স্বপন দেবনাথ, সদর উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর মল্লিক এবং শেখেরহাট ইউনিয়ন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। সবার বহিষ্কারাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যাকলাপে’ জড়িত থাকার অভিযোগ।
খসরু বলেন, ফেসবুকে প্রার্থী মোস্তাফিজুরের ছবিতে লাইক-কমেন্ট করায় তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কারদেশে কারণ জানতে ছাত্রলীগের দায়িত্বশীলদের ফোন দেওয়া হলে বলেছেন, ‘লিডার (আমু) জানেন।’ লিডারকে ফোন দিলে বলেছেন, ‘যারা বহিষ্কার করেছেন তারা জানেন, আমি জানি না।’ শাকিল বলেন, বহিষ্কারের পর বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেছেন, লিডারের প্রার্থী আরিফ খানের নির্বাচন করতে হবে।
নলছিটির প্রার্থী মোস্তাফিজুর জানান, স্থানীয় নেতাদের ডেকে ডেকে সমর্থন করা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দিচ্ছেন এমপি আমু। তাঁর কথার বাইরে গেলে বহিষ্কার হতে পারেন– এই আতঙ্কে আছেন সবাই।
তিনি বলেন, ২৭ এপ্রিল থেকে এমপি ও তাঁর ভায়রা কিরণের এলাকায় অবস্থান উদ্দেশ্যমূলক। ইসিতে দেওয়া অভিযোগে সব বিষয় উল্লেখ করেছেন। জোর করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো হতে পারে– এই ভয়ে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন।
মোস্তাফিজুরের ভাই মোল্লারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান অভিযোগ করেন, এমপি সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করলে ইউপি চেয়ারম্যানদের সরকারি বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
আরেক প্রার্থী সেলিম ইসিতে অভিযোগ দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে আমির হোসেন আমু, তাঁর ভায়রা ফখরুল মজিদ মাহমুদ কিরণ ও আমুর আস্থাভাজন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনিরের মোবাইল ফোনে বারবার কল দেওয়া হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, ‘দুজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর ইসিতে করা অভিযোগের বিষয়টি তারা জেনেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছেন।’