কার্নিভাল ক্রুজ রো রো। এটা ফেরির নাম। রাজধানীর পোস্তগোলা ঘাট থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে যায় সাধারণত। কিন্তু কী যেন হলো আজ। ঘাটে প্রস্তুত কার্নিভাল ক্রুজ রো রো। যাত্রী–গাড়িও উঠেছে বেশ। কিন্তু ‘সময় বহিয়া গেলেও’ ফেরি আর ছাড়ে না। কী এক টানে যেন সে আটকে থাকে ঘাটে। যাবে না বলেই যেন মনস্থির করেছে। যাত্রীরা উচাটন। ফেরি কর্তৃপক্ষও কিছু বলে না। পরে খোঁজ নিয়ে যাত্রীরা জানলেন, একজন ভিআইপি যাবেন এই ফেরিতে। তাঁর জন্যই অপেক্ষা। কে এই ভিআইপি যাত্রী? উত্তর জানা গেল, ভোলা–৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন।
ভোলার একজন সংসদ সদস্যের জন্য প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, আসন খালি থাকার পরও যাত্রী তোলা বন্ধ রাখা হয় বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। এতে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা পড়েন বিড়ম্বনায়। পরে বিক্ষোভের মুখে ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ফিরে যান বলে দাবি করেছেন যাত্রীরা। অবশ্য তাঁর জন্য ৩ ঘণ্টা ফেরির অপেক্ষা করা বা বিক্ষোভের মুখে তাঁর ফেরিতে শেষ পর্যন্ত না যাওয়া—দুই অভিযোগই অস্বীকার করেছেন নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন।
এ বিষয়ে ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, ‘তথ্যটি সঠিক নয়। এক ঘণ্টার মতো দেরি হয়ে থাকতে পারে। ঘাট থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় ফেরি থাকে। ওই ফেরিতে আমার রুম রিজার্ভ করা ছিল। সকাল ৯টার দিকেই রাস্তার ট্রাফিকের কারণে আমি বুঝতে পারি ফেরি ধরতে পারব না। তখনই আমি জানিয়ে দিই।’
বিক্ষোভের মুখে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ‘এমন কিছু হয়নি’ উল্লেখ করে এমপি শাওন বলেন, ‘ফেরি বুক হয়ে গিয়েছিল। গাড়ি ওঠার জায়গা ছিল না। আর আমি তো আগেই জানিয়ে দিয়েছি যে, আমি যাচ্ছি না।’
যদিও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শুক্রবার রাজধানীর পোস্তগোলা ব্রিজের কার্নিভাল ক্রুজ রো রো ফেরি সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা। প্রায় এক ঘণ্টা পর ফেরি কর্তৃপক্ষ জানায়, ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী শাওন যাবেন, তাই ফেরি ছাড়তে দেরি হচ্ছে। তার আগে ফেরিতে ওঠার পথ আটকে যাত্রী ও মোটরসাইকেল তোলা বন্ধ রাখা হয়।
যাত্রীদের অভিযোগ, সিট ফাঁকা থাকার পরও এমপির কথা বলে তাদের উঠতে দেওয়া হয়নি। যাত্রী ও মোটরসাইকেল না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা ফেরির সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী বলেন, এরপর সকাল ১০টার দিকে সেখানে যান এমপি শাওন। সাধারণ জনগণ ও বাইকারদের ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান ও প্রতিবাদের মুখে এমপির গাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। বিক্ষোভের মুখে তিনি ফিরে গেলেও ফেরি ছাড়ে আরও ৪৫ মিনিট পর।
ওই যাত্রীর দাবি, তিনি ৯৯৯ এ কল করে নৌপুলিশের সহায়তা চাওয়ার পর সকাল পৌনে ১১টায় ছাড়া হয় ফেরি।
ঘটনাস্থলের ফুটেজেও যাত্রীদের এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা গেছে, ঘাটে সংসদ সদস্যের গাড়ি উপস্থিত। ফেরিতে ওঠার মুখে মোটরসাইকেল ও গাড়ির দীর্ঘ লাইনের মাথায় ওই গাড়িটি শেষে ঘুরিয়ে নেওয়া হয়। আর ফেরির একেবারে মুখে পুলিশ সদস্যরা ফেরি ছাড়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন। এই ফুটেজ প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগের সাথে মিলে যায়।