বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি নতুন সূচনার দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছে। নতুন এই বাংলাদেশকে নিয়ে প্রতিটি সচেতন নাগরিক একটি সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা বুকে নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলায় বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে এই আশা সবার।
বলা হয়ে থাকে শিক্ষকেরা সমাজ সংস্কারক। তারা সমাজকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যাযন। শিক্ষকদের হাতে গড়ে ওঠেন পৃথিবীর যতো জ্ঞানী-গুণী, নায়ক-মহানায়ক। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষক সমাজ আজ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা বৈষম্যের বেড়াজালে বন্দি। আমি আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি আদর্শ, মজবুত ও টেকসই সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষা সংস্কার ও শিক্ষকদের বৈষম্য দূরীকরণে দ্রুত ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ নেবে।
তবে আজ যে বিষয়টির প্রতি আলোকপাত করছি তা হলো এমপিও শিক্ষকদের বহুল প্রত্যাশিত এবং ন্যায্য অধিকার ‘বদলি’ যেটি থেকে তারা বঞ্চিত। বিভিন্ন সময় বদলি বিষয়ক আলাপ- আলোচনা, সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হলেও তা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। তবে আসার কথা বর্তমান সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা এ বিষয়ে তার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। আশা করছি তিনি দ্রুতই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।
এমপিও শিক্ষকদের দুঃখ দুর্দশা দেশের সচেতন সমাজের জানা আছে নতুন করে কিছু বলতে চায় না। শুধু সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। ঘুনে ধরা এই সমাজকে বদলাতে হলে বদলাতে হবে শিক্ষাব্যবস্থা, বদলির সুযোগ দিতে হবে এ শিক্ষার কারিগরদের।
বদলি কেনো প্রয়োজন? প্রথমত এটি একটি আইনি ও মানবীয় অধিকার। যেসব শিক্ষক নিজ এলাকা ছেড়ে দূরে কোথাও চাকরি করছেন তারা সবসময় দুটি মানসিক চিন্তায় থাকেন। ১. কর্মস্থলে থাকলে পরিবার পরিজন অর্থাৎ স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতাকে দেখাশোনা করতে না পারা এমনকি ভীষণ বিপদের সময় কাছে থাকতে না পারা। ২. আবার যখন ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে থাকেন তখন কর্মস্থলে ফেরার চিন্তা।
এবার যদি অর্থনৈতিক বিষয়ে বিবেচনা করি তবে তো আরো বিপদ কেনোনা যেখানে এই স্বল্প বেতনে একটি পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে যারা পরিবার ছেড়ে দূরে কোথাও চাকরি করে তাদের তো বলতে গেলে দুটি পরিবার।
সময় বদলেছে, দেশের সরকার বদলেছে, ইনশাআল্লাহ দেশও বদলে যাবে। আর দেশের আগামী প্রজন্মকে বদলাতে শিক্ষকদের বদলির বিকল্প নেই। আশা করছি একটি সর্বজনীন ও গ্রহণযোগ্য ‘বদলি’ নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে খুব শিগগির প্রকাশ হবে। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে বদলি নীতিমালায় যেসব বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে তার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-১. বদলি হবে ঐচ্ছিক এবং সর্বজনীন অর্থাৎ সকল ইনডেক্সধারী শিক্ষক আবেদনের যোগ্য ২. বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচ্য ৩. স্থায়ী ঠিকনার সঙ্গে কর্মস্থলের দূরত্ব বিবেচনা ৪. চাকরির অভিজ্ঞতা ৫. মহিলা আবেদনকারীরা স্বামীর ঠিকানায় ৬. স্বামী-স্ত্রী উভয় কর্মজীবী হলে যেকোনো একজন বিশেষ অগ্রাধিকার ৭. প্রতি গণবিজ্ঞপ্তির আগে ইনডেক্স বিজ্ঞপ্তি ৮. চাকরির কোনো মেয়াদ থাকবে না ৯. স্কুল-মাদরাসা-কারিগরি সমান সুযোগ ইত্যাদি। এ ছাড়া আরো কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে একটি মানসম্পন্ন সর্বজন গৃহীত নীতিমালার প্রত্যাশা রইলো।
‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষার মেরুদণ্ড মাধ্যমিক শিক্ষা আর মাধ্যমিক শিক্ষার মেরুদণ্ড শিক্ষক-কর্মচারী।’ দেশ মেরামতের যে কাজ ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকুক।
লেখক: শিক্ষক, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার