জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচন থেকে দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে চিঠি দিয়েছিলেন বলে জানান দলটির বর্তমান মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। কিন্তু বেগম রওশন এরশাদসহ কয়েকজন নেতা এরশাদের সঙ্গে বেইমানি করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। জাপা সেই নির্বাচনে অংশ না নিলে অসাংবিধানিক পরিস্থিতি ও সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হতো বলেও দাবি করেন চুন্নু।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে গত সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে লালমনিরহাট-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন জানান, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ তাঁর কাছে পরাজিত হন এবং জামানতও বাজেয়াপ্ত হয় এরশাদের। এ বক্তব্য নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও মসিউর রহমান রাঙ্গা পাল্টা বক্তব্য দেন।
সোমবার পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সংসদে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। স্পিকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই দিন বলেন, বক্তব্যে তথ্যগত কোনো ত্রুটি পেলে বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হবে।
এরশাদের জামানত বাতিল ইস্যুর প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন মুজিবুল হক চুন্নু। তাঁরা কয়েকজন ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে বেইমানি ও বিদ্রোহ করে বেগম এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচন মহাজোটে হয়েছিল। ২০১৪ এবং ২০১৮… জাতীয় পার্টি সব সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং নির্বাচনমুখী দল।
চুন্নু বলেন, ‘২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচন জাতীয় পার্টি বর্জন করেছিল। আমাদের চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ চূড়ান্ত সময়ে বললেন নির্বাচন করবেন না এবং সারা দেশের সমস্ত প্রার্থীকে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য চিঠি দেন। নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নেন।’
চুন্নু বলেন, ‘সেদিন এমন একটা অবস্থা হয়েছিল... বিএনপি নির্বাচনে আসে না। কোনো দল আসবে না। জাতীয় পার্টি যদি না আসে তাহলে বাংলাদেশে একটা অসাংবিধানিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো। সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হতো। সেই দিন বেগম রওশন এরশাদ এবং আমরা কয়েকজন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে বেইমানি ও বিদ্রোহ করে বেগম এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচন করেছিলাম।’
লালমনিটরহাট-১ আসনে এরশাদের নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘সেই নির্বাচনের সময় এরশাদ সাহেব লালমনিরহাট, রংপুরসহ কয়েকটি আসনে আগেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। রংপুরেও তিনি নির্বাচন করতে চাননি। আমরা শুধু বৈধতার জন্য... এই সংসদে এরশাদ সাহেবের মতো লোক আছে, এটা প্রমাণ রাখার জন্য সেদিন আমরা কষ্ট করে তাঁকে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করেছি। লালমনিরহাটে তিনি নির্বাচন করেন নাই।’
লালমনিরহাট-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি মোতাহার হোসেনকে ইঙ্গিত করে চুন্নু বলেন, ‘গতকালকে (সোমবার) যিনি বক্তব্য রাখলেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে আমরা বেগম এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনে না আসতাম তাহলে তিনি এমপি বা প্রতিমন্ত্রীও হতে পারতেন না। আমাদের নির্বাচন করার কারণে তিনি প্রতিমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন। মানুষ যে কেন ভুলে যায় অতীত।’
চুন্নু বলেন, ‘এরশাদ সাহেব নির্বাচন করেন নাই। লালমনিরহাটে তিনি প্রত্যাহার করেছিলেন। কিন্তু তিনি (মোতাহার হোসেন) কী করে বলেন এরশাদ সাহেবকে পরাজিত করেন। তাঁর মতো লোক… আমরা কি বলতে পারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ফেল করাব। এত বড় দুঃসাহস কি আমার হবে? এই রকম দুঃসাহসিক কথা তিনি কী করে বললেন? তিনি অসত্য কথা বলেছেন।’
বেইমানি করে নির্বাচন করেছিলেন জানিয়ে চুন্নু বলেন, ‘২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে এরশাদ সাহেবের সঙ্গে আমরা কয়েকজন বেইমানি করে নির্বাচন করেছিলাম বলেই নির্বাচন হয়েছিল। তিনি প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। আজকে কী করে এরশাদ সাহেব সম্পর্কে এই কথা বলতে পারে। এরশাদ সাহেব আর যাই করেন কাবিখা বিক্রি করেন নাই। বালু বিক্রি করেন নাই। অনেকই এগুলো করেন। তিনি মোতাহার হোসেনের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, নির্বাচন করেন নাই। তাঁকে ফেল করানো হয়েছে।’
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদে লালমনিরহাট-১ আসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোতাহার হোসেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ৮১৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে ৫ হাজার ৩৮১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দ্বিতীয় হওয়া সাদেকুল ইসলাম পেয়েছিলেন ৬ হাজার ৫৫১ ভোট।
এদিকে সোমবার জাতীয় সংসদে সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত ইস্যুতে সরকারদলীয় এমপি মোতাহার হোসেন ও জাতীয় পার্টির এমপিদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে মঙ্গলবার সংসদে রুলিং দিয়েছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে স্পিকার সরকার দলের এমপির রাষ্ট্রপতির ভাষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন বিষয়গুলো এবং বিরোধী দলের সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের বক্তব্যের অসংসদীয় ভাষা এক্সপাঞ্জ করেন।
স্পিকার বলেন, গতকাল (সোমবার) মহামান্য রাষ্ট্রপতির ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে মাননীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন বক্তব্য দানকালে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন যে বিষয়গুলো উত্থাপন করেছিলেন, সেই সব বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হলো। সেই সঙ্গে বিরোধী দলের সংসদ সদস্য মাননীয় কাজী ফিরোজ রশীদ তাঁর বক্তব্যে যে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেছেন তাও এক্সপাঞ্জ করা হলো।