আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শ্রেণি কক্ষে সরাসরি ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। রাজধানীর কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা আজ সকাল থেকে এমন এসএমএস পাচ্ছেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের বলছেন, ‘১ ফেব্রুয়ারি থেকে কলেজে আসতে হতে পারে। সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশ।’
জানা যায়, স্বাস্থ্য বিধি মেনে অন্তত তিন মাস ক্লাস নিয়ে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর এই পরীক্ষা হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। এরই মধ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে প্রতিটি বিষয়ের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষাবোর্ডেগুলোতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বোর্ড থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌছে দেওয়ার কথা রয়েছে। অপরদিকে এসএসসি ও সমমানের অন্তত ২০ লাখ পরীক্ষার্থী অটোপাসসহ বেশ কিছু দাবি বাস্তাবায়নে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
জানতে চাইলে শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হবে। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে শুধু পরীক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণির ক্লাসও খুলে দেওয়া হবে।এনসিটিবির (ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ) ও সংক্ষিপ্তি সিলেবাস তৈরির প্রধান সমন্বয়ক প্রফেসর সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিটি বিষয়ের মূল সিলেবাস থেকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যে বিষয়গুলো না শিখলেই নয়; সেগুলো সিলেবাসে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ফেব্রুয়ারিতে স্কুল খোলা সম্ভব হলে দুই থেকে আড়াই মাস যাতে ক্লাসে পাঠদান করিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায় সেভাবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। আর করোনার কারণে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না যায় সেক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুযায়ী অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তাব করেছি। শিক্ষকরা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিক্ষাজট কমাতে বিগত কয়েক বছর ধরে বিশেষ কারণ ছাড়া ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও ২ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আয়োজন করে আসছে। কিন্তু করোনার কারণে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারেনি। জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ফল ঘোষণার সিদ্বান্ত নেয়। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। ১০ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইন ও সংসদ টিভিতে ক্লাস পরিচালনা করা হলেও শতভাগ শিক্ষার্থীকে ভার্চুয়াল ক্লাসে যুক্ত করতে পারেনি। যে কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা অটোপাসের দাবি তুলেছে।
রাজধানীর বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও কর্মসূচির সমন্বয়ক রায়ান উৎস বলেন, এখনো ভ্যাকসিন আসেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন ১৮ বছরের নিচের কাউকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। আমরা পরীক্ষা দিতে গিয়ে যদি আক্রান্ত হলে পরীক্ষা দিতে পারবো না। ১৪ দিন আমাদের কোয়ারেনটাইনে থাকতে হবে। কোন পরীক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হলে তার একটি বছর শেষ হয়ে যাবে। আরেকটি কারণ হচ্ছে- জুন মাসে পরীক্ষা হলে রেজাল্ট দিতে আগস্ট-সেপ্টেম্বর লেগে যাবে। কলেজে ভর্তি হতে অক্টোবর মাস শেষ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের সেশন জটে পড়তে হবে। শিক্ষা জীবন থেকে প্রায় এক বছর শেষ হয়ে যাবে। আর এখনই অটোপাস ঘোষণা করে কলেজে ভর্তির কার্যক্রম শুরু করা হলে আমাদের সেশন জটে পড়তে হবে না।