এসএসসিতে গরহাজির ৩২ হাজার, নেপথ্যে কী

রুম্মান তূর্য ও মিথিলা মুক্তা |

চলমান এসএসসি পরীক্ষায় রাজধানীর তেজগাঁও আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে অংশ নেয়ার কথা ছিলো সাদিয়া ও ফারজানার। কিন্তু বিয়ের পিঁড়িতে বসে যাওয়ায় পরীক্ষার হলে আর বসা হয়নি তাদের। বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের মতো আরও অনেক ছাত্রীই এবার এসএসসি থেকে ছিটকে পড়েছেন।    

সব মিলিয়ে এবার ফরম পূরণ করেও এসএসসিতে বসতে না পারা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২ হাজারেরও বেশি।  তাদের কতোজন ছাত্র ও কতোজন ছাত্রী সে হিসেব শিক্ষা প্রশাসনের কাছে নেই। দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে অন্তত ২৫ জন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেও এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। আবার প্রধান শিক্ষকদের মধ্যেও অনেকে সঠিকভাবে বলতে পারেননি মোট কতজন পরীক্ষার্থী ও কতজন অনুপস্থিত। অনেকেই বলেছেন, কাগজ দেখে বলতে হবে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষা না দেয়া ছাত্রদের অনেকে বাস্তবতার তাগিদে কর্মে জড়িয়েছেন। আর ছাত্রীদের অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। তবে প্রস্তুতি ভালো না হওয়ার কারণেও কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তেজগাঁও আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচজন শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেও এসএসসি পরীক্ষা দেননি। এদের মধ্যে তিনজন ছাত্র ও দুইজন ছাত্রী। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আবদুল মান্নান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সাদিয়া ও ফারজানার বিয়ে হয়ে গেছে। তাই তারা পরীক্ষা দিচ্ছেন না। এই এলাকার (তেজগাঁও) মেয়ে হলেও তাদের বিয়ে হয়েছে দূরে। একজনের গাজীপুরে বিয়ে হয়েছে বলে শুনেছি। তবে, প্রস্তুতি ভালো ছিলো না বলে তিন ছাত্র পরীক্ষা দিচ্ছেন না বলে ধারণা করছি। 

জানা গেছে, করোনা মহামারির পর গত কয়েকবছরে দেশে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বেড়েছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি–২০২৩ প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। 

এমন পরিস্থিতিতে গত ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ বছর ২০ লাখ ৭২ হাজার শিক্ষার্থীর এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিলো।  কিন্তু, গত ৩০ এপ্রিল, ২ মে ও ৩ মে অনুষ্ঠিত প্রথম তিন পরীক্ষায় ৩০ হাজারেরও বেশী পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকেন। 

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির হিসাব বলছে, এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষায় ৩০ এপ্রিল ৩১ হাজার ৪৪৭ জন, ২ মে ৩২ হাজার ৩৫৬ জন এবং ৩ মে ৩০ হাজার ১৮৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেননি। তবে এদের কতজন ছাত্র ও কতজন ছাত্রী সে হিসাব কারো কাছেই নেই। আবার প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় পরীক্ষায় অনুপস্থিতির সংখ্যা বাড়লেও তৃতীয় পরীক্ষায় কেনো ফের কিছুটা কমে গেলো তা নিয়েও কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, কতজন ছাত্র বা ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছেন না তার সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। খোঁজ নিয়ে জানানো যেতে পারে। 

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, প্রতিবছরই এমন সংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকেন। এটি নতুন নয়। তবে, কি কারণে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না তা জানতে গবেষণা প্রয়োজন। আমরা ভাবছি পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিত থাকার আসল কারণ খুঁজে বের করতে গবেষণা করবো। 

 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.014743804931641