রাজধানীর মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ড. মুন্সী শরীফ-উজ্জামানকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনে কেন্দ্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করে প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সদস্য শাহ আলম অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করেন বলে জানা যায়। শাহ আলম গতকাল শনিবার পরীক্ষার দিনেও অবৈধভাবে এক ঘন্টার বেশি সময় কেন্দ্রে ছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির বিতারিত ও অত্যাচারী সভাপতি আওলাদ হোসেনের সাগরেদ বলে অভিভাবক ও শিক্ষকদের অভিযোগ। তবে শাহ আলম তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, রাজধানীর আলোচিত-সমালোচিত মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় এসএসসি বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা শুরু হয়। তার আগে সকাল সাড়ে দশটায় প্রতিষ্ঠানটিতে আসেন গভর্নিং বডির সদস্য শাহ আলম।
শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরীক্ষা কেন্দ্র ও এর আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও কমিটির সদস্য পরিচয়ে তিনি কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. মুন্সী শরীফ-উজ্জামান লোক পাঠিয়ে শাহ আলমকে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি সে অনুরোধ না রেখে আরও কিছু সময় কেন্দ্রে অবস্থান করেন। পরীক্ষা শেষে খাতা গোছানোর সময় তিনি গভর্নিং বডির আরও কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে কেন্দ্রের গেটের সামনে এসে অধ্যক্ষের সঙ্গে উচ্চবাচ্য শুরু করেন এবং তাকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেন। পরে পরীক্ষা কন্ট্রোলরুমে প্রবেশ করে তিনি প্রায় ১ ঘণ্টা অবস্থান করেন। সেখানে কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়টি নিয়ে বাকবিতণ্ডায় জড়ান। তিনি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা বিষয়টি নিয়ে অনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে চাইছেন না। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ ড. মুন্সী শরীফ-উজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নিং বডির সদস্য শাহ আলম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার বা অধ্যক্ষকে লাঞ্ছনার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা অসত্য। শিক্ষকরা যদি এ ধরনের অভিযোগ করেন তাহলে তা লজ্জার। আইডিয়ালের মতো একটা বড় স্কুলের শিক্ষার্থীরা আমাদের স্কুলে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাই পরীক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে আমরা গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্য প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা গেটের বাইরে অবস্থান করেছি। শাহ আলম জানতে চান কোন কোন শিক্ষক এ বিষয়ে শিক্ষাবোর্ড ও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা শাখা জানায়, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, বছরের পর বছর টর্চার সেল রাখাসহ নানা সমস্যার পর প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের একজন অধ্যাপককে প্রেষণে পদায়ন দেয়া হয়। কিন্তু তাকেও জিম্মি করে ফেলেছে আওলাদের উত্তরসূরীরা। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। তাকে সরিয়ে আবার একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বসেছেন কয়েকমাস আগে। বর্তমানে নিয়মিত কমিটি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।