সমুদ্রের পানিতে বিসর্জন হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দূর্গোৎসবের প্রতীমা। 'মা দুর্গা'র বিদায়ে হাজির হওয়ার কথা ছিল হিন্দু পূর্ণার্থীদের। কিন্তু দেশের সর্ববৃহৎ বিসর্জনের এই আয়োজনে হাজির হয়েছেন হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ নানা ধর্মের, নানা মতের মানুষ। তাও আবার হাজারে হাজার।
রোববার বিজয়া দশমীর দিনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্ট হয়ে উঠেছিল উৎসবমুখর এক মিলন মেলার। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এসেছেন বিসর্জনে। মুসলিমসহ অন্যরা এসেছেন উৎসবে। আর লাখো পর্যটক এসেছেন দুর্গোপূজার ছুটিতে।
সব মিলিয়ে সমুদ্রের বালুকাবেলায় রোববারের বিকেলটা হয়ে উঠেছিল অসাম্প্রদায়িক এক উৎসবের। এ যেন প্রতীমা বিসর্জন নয়, লাখ লাখ মানুষের মিলন মেলা।
বেলা আড়াইটা থেকে সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্যদিয়ে বিসর্জন অনুষ্ঠানের শুরু হয়। পরে একে একে সবাই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
বক্তারা কক্সবাজার জেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন। কক্সবাজারে দুর্গোৎসবকে ঘিরে যে উৎসব মানুষের মাঝে দেখা যায়, তা দেশের কোথাও দেখা যায় না।
বিকাল ৩টার পর থেকে মন্ডপগুলো থেকে প্রতিমা বিসর্জন মঞ্চে আসতে শুরু করে। ট্রাকের বহর নিয়ে যুবকরা রং ছিটিয়ে বাজনা বাজিয়ে আনন্দ করতে করতে সমুদ্র সৈকতে নিয়ে আসছেন প্রতিমার বহর।
বক্তৃতা পর্ব শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সমুদ্রের লোনাজলে বিসর্জন দেয়া হয় প্রতিমা।
একে একে বিসর্জন হচ্ছিল, আর পূণার্থীদের মাঝে কান্না, আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশ। দেবী দূর্গার বিসর্জনে কেউ কাঁদছিলেন। কেউ আনন্দ করছিলেন।
কক্সবাজার শহরের গোলদীঘির পাড় এলাকার রাণীবালা দাশের চোখে ছিল পানি। তিনি বলেন, মা দূর্গার বিদায়কে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। দূর্গা মায়ের জন্য আবার আরেকটি বছর অপেক্ষা করতে হবে।
ঢাকার বারিধারা থেকে এসেছেন আবদুল করিম ও মাইমুনা খানম দম্পতি। তারা পূজোর ছুটিতে কক্সবাজার এসেছেন। তারা দূর্গোৎসবের এই আয়োজনে মুগ্ধ। তাদের জীবনে এমন আয়োজন দেখেননি।
রোববার (১৩ অক্টোবর) ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দূর্গোপূজা। এদিন প্রতীমা বিসর্জনে সমুদ্র সৈকতে আয়োজন করা হয়েছিল বিসর্জন অনুষ্ঠানের। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছাড়াও জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
বিসর্জন অনুষঠানে বক্তব্য দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, পুলিশ সুপার মো. রহমত উল্লাহ, বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, সাবেক পৌর মেয়র সরওয়ার কামাল, সদর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ভিপি শহিদুল আলম বাহাদুর, কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি মাহবুবর রহমান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু।
কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপক শর্মা দীপু জানান, এবার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিসর্জন হয়েছে ৩৪০টি প্রতিমা। কক্সবাজার শহর, জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং পার্বত্য বান্দরবান ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে প্রতিমা এসেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।
এবার কক্সবাজার জেলায় ১৫১টি প্রতিমা ও ১৭০টি ঘট পূজা মিলিয়ে জেলায় ৩২১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন ছিল। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা পুরো জেলায় দূর্গোৎসবের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।