কখনো বিদ্যালয়ে যায়নি তিন কোটি মানুষ

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দেশে সাক্ষরতার হার বাড়লেও একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ শিক্ষাগ্রহণের জন্য কখনো স্কুল বা মাদরাসায় যায়নি। শিক্ষালয়ে না যাওয়া এমন মানুষের সংখ্যা তিন কোটিরও বেশি। যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। শিক্ষালয়ে গেলেও প্রথম শ্রেণি পাস করতে পারেনি সাড়ে চার লাখ এবং প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেনি প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। কখনো শিক্ষালয়ে যায়নি এমন মানুষের হার সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ বিভাগে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আর্থসামজিক ও জনমিতিক জরিপ প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। জরিপে শিক্ষার স্তর হিসেবে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীকে হিসাব করা হয়েছে।

বিবিএসের জনশুমারি ও গৃহগণনার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার। এর মধ্যে পাঁচ বছরের নিচে রয়েছে ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। সেই হিসাবে পাঁচবছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ৬ হাজার ৬৭৪। এর ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ হিসাব করলে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩ লাখ ৫৫ হাজার ২৯ জন।

কখনো স্কুল বা মাদরাসায় না যাওয়াদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীদের হার বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ১৮.০৬ শতাংশ পুরুষ কখনো শিক্ষাগ্রহণের জন্য স্কুল বা মাদরাসায় যায়নি, সেখানে এই হার নারীদের ক্ষেত্রে ২০ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

বিভাগের হিসাবে কখনো শিক্ষালয়ে না যাওয়াদের হার সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ বিভাগে। এ বিভাগের ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ মানুষ কখনো স্কুল বা মাদরাসায় যায়নি। এরপর পর্যায়ক্রমে রংপুর বিভাগে ২৩.৭৫ শতাংশ, সিলেটে ২২.১৩, রাজশাহীতে ২১.১৭, খুলনায় ২০.৭৬, চট্টগ্রামে ১৬.৫৭ এবং ঢাকা বিভাগে এ হার ১৫.০৭ শতাংশ। এ হার সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে, ১৫.০৭ শতাংশ।

জরিপ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৫ বছরের বেশি বয়সী মোট জনসংখ্যার মধ্যে স্কুলে গেলেও প্রাক প্রাথমিক শেষ করতে পারেনি ৪ লাখ ৫২ হাজার ১২৯ জন। প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩২ জন এবং চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৮ হাজার ৫২৯ জন। অর্থাৎ শিক্ষালয়ে গেলেও প্রায় আড়াই কোটি মানুষ প্রাথমিকের গণ্ডি পার করতে পারেনি।

মাধ্যমিকেই ঝরে গেছে মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ৬৫ হাজার ৬২০ জন। মানে ৩৬.৪১ শতাংশ মানুষ। এর মধ্যে ৩৮.৭১ শতাংশ নারী এবং পুরুষ ৩৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। চতুর্থ শ্রেণি পড়াশোনার ক্ষেত্রে পুরুষরা এগিয়ে থাকলেও নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে বেশি নারীরা।

এদিকে, দেশে বর্তমানে এসএসসি এবং সমমান পাস করা মানুষের সংখ্যা রয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৭১ হাজার ২৯৯ জন, যা ৫ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। এসএসসি পাস করা জনগোষ্ঠীর মধ্যেও পুরুষের তুলনায় নারী বেশি। যেখানে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ পুরুষ এসএসসি পাস করেছে, সেখানে নারীদের ক্ষেত্রে এ হার ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।

বর্তমানে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ এইসএসসি বা সমমান পাস করেছে। সেই হিসাবে মোট জনসংখ্যার মধ্যে এইএসসি পাস করেছেন ১ কোটি ১১ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৭। এ ক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষ বেশি। এ ছাড়া ডিপ্লোমা, নার্সিং এবং মিডওয়াফারি পাস করেছেন ৪ লাখ ৫ হাজার ৩৫৭ জন। এ ক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষরা এগিয়ে। পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যমে শিক্ষা নিয়েছেন অনানুষ্ঠানিক ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫২২ জন।

এদিকে বর্তমানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী রয়েছে ৮৬ লাখ ২১ হাজার ৬৩৯ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। জরিপে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হিসেবে ডিগ্রি, অনার্স, এমবিবিএস, বিএসসি, পিএইসডিসহ সমমান পাস করাদের বোঝানো হয়েছে। স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে পুরুষ বেশি। দেশে বর্তমানে স্নাতকধারী নারী রয়েছে ৩.৮১ শতাংশ আর পুরুষ স্নাতকধারী ৭.২৪ শতাংশ।

স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী গ্রামের তুলনায় শহরে প্রায় তিনগুণ। গ্রামের স্নাতকধারীর হার ৩ দশমিক ২০ শতাংশ, সেখানে শহরে এই হার ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ শহরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০ শতাংশের ও বেশি মানুষ স্নাতকধারী। বিভাগের হিসাবে স্নাতকধারী সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগ। আর সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056099891662598