কথায় কথায় শিক্ষকদের বেতন আটকে দেন অধ্যক্ষ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ক্ষমতার অপব্যবহার করে কখনও কলেজের টাকা আত্মসাৎ, কখনও বা আটকে দিচ্ছেন শিক্ষকদের বেতন। হয়রানি করতে ছাড়ছেন না নারী শিক্ষকদেরও। প্রতিবাদ করলেই চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। যারা কলেজটি সরকারিকরণে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। এসব অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. এজাবুল হকের বিরুদ্ধে। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর কলেজটি সরকারিকরণ হয়।

অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে পারবেন না বলে কলেজটি সরকারীকরণে আপত্তি ছিল অধ্যক্ষ এজাবুল হকের। এ ছাড়া যাবতীয় আয় সরকারি কোষাগারে যাওয়া নিয়েও শঙ্কা ছিল। এ কারণে যারাই কলেজ সরকারিকরণে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। ২০২২ পর্যন্ত ইএফটির মাধ্যমে পুরো স্টাফের বেতন-ভাতা উত্তোলনের পাশাপাশি এমপিওর মাধ্যমেও বেসরকারি কলেজ হিসেবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। বিষয়টি নজরে আসার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার সাইফুল ইসলাম তাঁকে অতিরিক্ত গৃহীত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

জীববিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক শাহজালাল উদ্দীন জানান, কলেজ সরকারীকরণে তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন। এ কারণে অধ্যক্ষ তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করেন। এ কারণে অধ্যক্ষ ১২ জন বহিরাগত নিয়ে পিস্তল দেখিয়ে হুমকি দেন। এ ছাড়া তাঁর বেতনও আটকে দেওয়া হয়। পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযোগ করার পর বেতন পান। একইভাবে অধ্যাপক মনসুরা বেগমেরও তিন মাসের বেতন আটকে দেন। পরে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে মনসুরা বেতন পান। কারণ দর্শানো ছাড়াই অধ্যক্ষ বেতন আটকে রেখেছেন প্রভাষক জোনাব আলীর। তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছেন, যার অনুলিপি তিনি জেলা প্রশাসকের কাছেও দিয়েছেন।

অধ্যক্ষ এজাবুল হক কলেজের আয়ন ও ব্যয়ন কর্মকর্তা (ভিডিও) হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি এ ধরনের অনিয়ম করে যাচ্ছেন। তিনি গত বছর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত কারো বেতনই সময় মতো ছাড় করেননি। অবৈধভাবেই শিক্ষকদের মূল যোগদানপত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে। আটকের রেখেছেন। টাইম স্কেল বা গুলোলতি হাতে যারা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান, তাদের কাগজপত্রে অধ্যক্ষ স্বাক্ষর করেন না বলে জানান প্রভাষক রোকেয়া খাতুন। এভাবে বিভিন্ন সময় শিক্ষক- কর্মচারীদের বাধ্য করে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা হাতিয়েছেন। জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ে যোগাযোগ করে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষ সংকট থাকা সত্ত্বেও একাডেমিক ভবনের তৃতীয় তলার দুটি কক্ষ দখল করে সেখানে বহিরাগতদের নিয়ে আড্ডা দেন। কলেজের বাগান থেকে ফল বিক্রি করলেও এর কোনো হিসাব দেন না। দরপত্র ছাড়াই সম্প্রতি ছয়টি গাছ বিক্রি করেছেন। সুযোগ পেলেই নারী সহকর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করেন।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ রেহানা আশরাফীর অভিযোগ, অধ্যক্ষ এজাবুল হক কম্পিউটার অপারেটরকে দিয়ে সুকৌশলে তাঁর আপত্তিকর ছবি তুলেছেন। সেই ছবি ফেসবুকে ভাইরালের হুমকি দিচ্ছেন।

সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যক্ষ এজাবুল হক। অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে পদত্যাগ করবেন বলেও জানান। তিনি বলেন, দুই শিক্ষক চার দিন অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে আপত্তিকর ভাষায় জবাব দেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ দেখছে। জোনাব আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ও তথ্যপ্রমাণ থাকায় তাঁর বেতন আটকে রাখা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলমগীর কবীর বলেন, কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029079914093018