কথিত বুদ্ধিজীবীরা রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে দিয়েছে: আলী রীয়াজ

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, বাংলাদেশের কথিত বুদ্ধিজীবীরা তাদের আত্মাকে বিক্রি করে রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। এছাড়ও ভয়ের সংস্কৃতি কেটে গেছে, প্রশ্ন করার মতো মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।  

শনিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের অডিটোরিয়ামে জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আহত কবি ও লেখকদের গল্প শীর্ষক আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে কালের ধ্বনি। অনুষ্ঠানে সহোযোগিতা করেছে আইসি ফার্মা এবং বই পরিবেশনা করেছে বই মই প্রকাশনী।

আলী রীয়াজ বলেন, ফ্যাসিজমের একটি ধারার পতন আমরা দেখতে পেরেছি কিন্তু ফ্যাসিবাদ পুরোপুরি পতন হয়নি। গত ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিকতার সঙ্গে বিভিন্ন আইন, ডিজিটাল অ্যাক্টসহ নানা অনুষদ মিলে ভয়ের সৃষ্টি করা হয়েছে। এই ভয়কে বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের কথা এঁটে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কথিত বুদ্ধিজীবীরা তাদের আত্মাকে বিক্রি করে রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। তারা এটাকে অর্জন বলে আবার প্রচার করে। জুলাই অভ্যুত্থানের একদম শেষ দিকেও কথিত বুদ্ধিজীবী এবং লেখকরা রাজপথে দাঁড়াতে সাহস করেনি।

তিনি আরো বলেন, অতীতে বাংলাদেশে তিন বার গণ অভ্যুত্থান হয়েছে। ৬৯-এর অভ্যুত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে শিল্পী-কবিরা। ৯০-এর গণ অভ্যুত্থান ঘটেছিল জোটের মাধ্যমে সেখানেও কবি সাহিত্যিকরা সংশ্লিষ্ট ছিলেন। কিন্তু ২৪-এর আন্দোলনে তাদের সংশ্লিষ্টতা চোখে পড়ার মতো না। স্বাধীন বুদ্ধিজীবীর প্রধান কাজ ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা। কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম গত ১৫ বছর স্বাধীনতা ভোগ করেনি। বাংলাদেশ গণমাধ্যমগুলো ব্যক্তি মালিকানার ভিতর দিয়ে সত্যিকার গণমাধ্যম হয়েই উঠেনি। মিডিয়া অন্য করপোরেশনের ইন্টারেস্ট রোধের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এভাবে কাজ করতে গিয়ে মিডিয়ার আসল ভূমিকা পাল্টে গেছে। মিডিয়াকে ব্যক্তিপূজা থামাতে হবে। আমাদের দেশে আন্দোলন হয় কিন্তু পরিবর্তন হয় না। জুলাই আন্দোলন সেই সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। আমরা কতটুকু করতে পারব তা নির্ভর করছে সময়ের ওপর। যারা শহীদ হয়ে এই চিন্ময় দেশ দিলেন, তা সঠিকভাবে চলবে কি না আমাদের ওপর নির্ভর করবে। প্রায় ২ হাজার শহীদ দেশটা আমাদের জিম্মাদারিতে দিয়ে গেছেন।

লেখকদের মধ্যে হাসান ইমাম বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিজমকে টিকিয়ে রাখতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন লেখকরাই এবং এই লেখকরাই আন্দোলনে সবচেয়ে কম ভূমিকা রেখেছেন। ফুল, লতা, প্রেম নিয়ে এতদিন ব্যস্ত থেকেছেন। সামনের বইমেলায় জুলাই নিয়ে আবার চেতনা বেচবেন। এমনটা করতে পারবেন না, আমাদের চোখ-কান খোলা আছে।

লেখক ইব্রাহিম নিরব বলেন, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই ফ্যাসিজম তৈরি হয়। সাংস্কৃতিক ফ্যাসিজম রুখতে আমাদের লেখক সমাজের কলম চালিয়ে যেতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিজম শুরু হয়েছে দেশ স্বাধীন হওয়ার শুরু থেকেই এবং শুরু করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই। আমরা ৭ মার্চের ন্যারেটিভ নিয়ে বিতর্ক জানি। তিনি স্বাধীনতার বক্তব্য দিয়েও পাকিস্তানকে ধারণ করতেন।

লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, বাকশালের কারণে আমি ছোট থেকেই রাজনৈতিক সচেতন ছিলাম। আমি মুজিবুরের দুঃশাসন দেখেছি। মুজিববাদ ও শেখ হাসিনাকে শক্তিশালী করেছে পুলিশ এবং দেশের ইন্টিলিজেন্স ইউনিট। এবার সময় এসেছে এই ইন্টিলিজেন্স ইউনিট অথবা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে নেরেটিভ আছে তা ভেঙে দেওয়ার। এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ভেঙে দেওয়া শক্তির নাম নজরুল ইসলাম। আমরা দেখেছি এই ২৪ আন্দোলনে শক্তি জুগিয়েছে নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা। আমাদের নজরুল পথ দেখিয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে, পথ দেখিয়েছে ২৪-এর আন্দোলনে। আমরা অতি শিগগিরই নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে গেজেট ভুক্ত দেখতে চাই।

ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, দেশের খ্যাতিমান লেখকদের নিয়ে গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেয়ার কথা বলতে গিয়ে তারা আমতা আমতা করেছেন, অনেকে বলেছেন করে লাভ কী। আমরা আমাদের তরুণ সমাজ নিয়ে আগ্রহী। তারা ফেসবুককেন্দ্রিক হলেও দেশের প্রয়োজনে এগিয়ে আসে, দেশকে ভালোবাসে।

শহীদুল্লাহ ফরায়েজী বলেন, সংবিধান করতে হবে বাংলাদেশের মানুষের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ এপ্রিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার যে মূলনীতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ৭২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধান তা জনগণকে দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, ড. কাজল রশীদ শাহীন, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, আমিরুল মোমেনীন মানিক। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, লতিফুল ইসলাম শিবলী, ডা. লকিয়ত উল্লাহ, ডা. সাকিরা পারভিন নোভা ও আবরার ফাইয়াজ (আবরার ফাহাদের ভাই)।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034699440002441