কমিউনিটি সেন্টার থেকে আদর্শ বিদ্যাপীঠ

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

আহমদবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মতিঝিল শিক্ষা থানার আওতাধীন। বিদ্যালয়টি আহমবাগ, বাসাবো, ঢাকা শহরে অবস্থিত। আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বিদ্যালয়টির পূর্ব ইতিহাসসহ সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে বর্তমান বিদ্যালয়ে রূপ লাভের বর্ণনা থাকছে আজকের লেখায়। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে আগে সরকারি খাস জমিতে ছিলো এলাকাবাসীর জন্য কমিউনিটি সেন্টার। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে স্বল্প পরিসরে এই স্থানে ঢাকা মিউনিসিপ্যালটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের কার্যক্রমকে ছাপিয়ে কমিউনিটি সেন্টারের কার্যক্রমই তখনকার সময়ে মূখ্য ছিলো। স্থানটি ছিলো এলাকার কিশোর-যুবাদের আড্ডাস্থল।

কালের বিবর্তনে স্থানটি মাদকাসক্তদের আখড়ায় পরিণত হয়। প্রাচীর না থাকায় প্রায় ১৩ শতাংশ বিদ্যালযের জমির প্রতি দখলদারদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বিদ্যালয়ের ভূমি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিরলস শ্রম এবং ঝুঁকি গ্রহণের নির্ভীকতায় রক্ষা পায়। এভাবেই প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অভিভাবকদের একাগ্রতা ও আন্তরিকতায় ফসল আজকের আহমদবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। 

বর্তমানে বিদ্যালয়টি প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীর আনন্দ আশ্রমে পরিণত হয়েছে। খেলাধুলা, সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীসহ আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান এ বিদ্যালয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পোশাকও আধুনিক এবং রুচিসম্মত। ছাই রং ও সাদা রংয়ের মিশেলের পোশাকে বালকদের জন্য সুদৃশ্য ব্যাজ, টাই। প্রাক-প্রাথমিক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বালিকাদের জন্য নির্ধারিত স্কাট, টাই, কাঁধের ব্যাজসহ শার্ট ও স্কার্ফ। ১০০ শতাংশ শিক্ষার্থীই পরিচ্ছন্ন পোশাকে বিদ্যালয়ে আগমন করেন। নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠানে, শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি, পাঠোন্নতি, পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলা বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে  এ বিদ্যালয়। সক্রীয় কাব কার্যক্রম, ‘মহানুভবতার দেয়াল’-এর কার্যক্রম।

তিনতলা দালানের প্রতিটি তলা ও শ্রেণিকক্ষসহ বেশ কিছু স্থানে রয়েছে সিসি ক্যামেরা..যা প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে মনিটরিং করা হয়। এ বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে নয়নাভিরাম গাছ, দোলনা, সবজি বাগান, বসার স্থানসহ রঙিন দেয়ালবেষ্টিত একটি মাঠ। আকারে খুব বড় না হলেও প্রায় ৪ শতাংশের এই মাঠটি পার্কের চেয়ে কম বলে মনে হয় না। নানা রঙের ফুল গাছ, সৌন্দর্যবর্ধক গাছ, বিভিন্ন ফল গাছ ও ঔষধি গাছে রয়েছে গাছের নাম সম্বলিত লেবেল কার্ড। বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে চারটি সুসজ্জিত কর্ণারসহ রয়েছে অ্যাকুরিয়াম, খেলনা, রাইড।

বিদ্যালয়ের প্রতিটি র্সিঁড়িতে রয়েছে বড় আয়না, যা শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। শিক্ষক মিলনায়তন ও প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ছাড়াও আটটি শ্রেণিকক্ষের প্রতিটি শ্রেণিই শ্রেণিভিত্তিক পাঠ সম্পর্কিত ছবি, উপকরণ ও দেয়ালচিত্র দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো। শিক্ষার্থীদের তৈরি হাতের কাজ শোভা পাচ্ছে প্রতি শ্রেণিতে। বিদ্যালয়ের সাতজন সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিকট বন্ধুসুলভ। পিতৃমাতৃ স্নেহে পরমযত্নে, সহজপদ্ধতিতে, প্রশিক্ষণ লব্ধজ্ঞান কাজে লাগিয়ে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার ও উপকরণসহ পাঠদান করে আসছেন শিক্ষকরা। তাই অভিভাবকদের ও এলাকাবাসীর কাছে বিদ্যালয়টি উত্তরোত্তর জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষে রয়েছে বুককর্নার এবং মুক্তিযুদ্ধ কর্ণারের পাশাপাশি রয়েছে সংশ্লিষ্ট বইয়ের ডিসপ্লে। রয়েছে মাল্টিমিডিয়া কক্ষ। প্রতি তলায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য স্বস্তিদায়ক ও পরিচ্ছন্ন শৌচাগার, যার সামনে টাঙানো রয়েছে শৌচাগার ব্যবহারবিধি ও হাত ধোয়ার কৌশল সম্বলিত দেয়াল চিত্র। বিভিন্ন দিবস উদযাপন ছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সময়ে আয়োজন করা হয় মৌসুমী ফল উৎসব এবং অভিভাবকদের জন্য প্রীতি প্রতিযোগিতা ম্যাচ। এসব দিক বিবেচনায় বিদ্যালয়টি শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়।  

বিদ্যালয়ের সমাবেশ মনোমুগ্ধকর। সমাবেশ চলাকালীন পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসীসহ পথচারীকেও থমকে দেয় চমৎকার ছন্দমিলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক কসরত। বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে রঙিন টাইলসের মিশেলে আকর্ষণীয় প্রাচীর,যা স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের কাছে ভালো লাগে। যে কারো নজর কাড়ে বিদ্যালয়ের নিজস্ব উদ্যোগে নির্মিত সুউচ্চ আধুনিক প্রধান গেট। যেখানে রূপালী রঙের স্টিলের চকচকে অক্ষরে বিদ্যালয়ের নামটি তার স্বমহিমা জানান দিচ্ছে। আর এভাবেই একটি কমিউনিটি সেন্টার হয়ে উঠেছে আজকের এক আদর্শ বিদ্যাপীঠ।

লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা গবেষণা পরিষদ ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম

 

 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ - dainik shiksha ইউএনওর ‘মানসিক নির্যাতনে’ শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতির সভা ১৮ সেপ্টেম্বর সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! - dainik shiksha নাহিদ-দীপুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিই মাউশি অধিদপ্তরের ডিজি হচ্ছেন! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048470497131348