ম্যানেজিং কমিটির পছন্দের প্রার্থীর যোগ্যতা না থাকায় ফরিদপুরের বোয়ালমারীর হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে ৬ জন প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমানকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু তার শিক্ষাজীবনে একাধিক তৃতীয় বিভাগ থাকায় তিনি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য যোগ্য নন বলে বিবেচিত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ওই নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
জানতে চাইলে ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা এবং নিয়োগ পরীক্ষার ডিজির প্রতিনিধি নাসিমা বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আয়ুবুর রহমান নামের একজন প্রার্থীর শিক্ষাজীবনে দুইটি তৃতীয় বিভাগ থাকায় বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী তিনি প্রধান শিক্ষক হওয়ার অযোগ্য। তার উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রিতে তৃতীয় বিভাগ। এজন্য নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তার কাগজপত্র ভালো করে যাচাই-বাছাই করা হবে। স্থগিতকৃত নিয়োগ পরীক্ষা পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হবে।
নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন শুক্রবার দুপুরে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আয়ুবুর রহমানসহ সব আবেদনকারীদের কাগজপত্র ঢাকায় পাঠিয়ে যাচাই-বাছাই করে পরে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষাজীবনে একাধিক তৃতীয় বিভাগ থাকায় সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমান ‘ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা’ নামক একটি বিতর্কিত বেসরকারি ইউনিভার্সিটি থেকে টাকার বিনিময়ে অনার্স এবং মাস্টার্সের ভুয়া সনদ কিনে এনে প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলাভিত্তিক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস জমা নেয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ের তথ্যসম্বলিত সেই কাগজে আয়ুবুর রহমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি ও ডিগ্রিতে তৃতীয় বিভাগ উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ অক্টোবর ওই কাগজ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হয়। এখন প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনের সময় আয়ুবুর রহমান বিএ ডিগ্রির কথা গোপন করে ওই বিতর্কিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেনা ভুয়া অনার্স-মাস্টার্স পাসের সনদ দাখিল করেছেন। এদিকে চাকরি বিধি অনুযায়ী চাকরিতে থাকাকালীন কেউ কোনো ডিগ্রি অর্জন করতে চাইলে তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। আর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই তিনি বোয়ালমারীতে বসে কুমিল্লার একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটি থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি অনার্স-মাস্টার্স কোর্স সম্পন্ন করলেন কখন এবং কীভাবে- এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী বৈধ সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল না থাকায় ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা, ফলাফল এবং একাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকারী ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়ুবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমবে বলেন, নিয়ম মেনেই আমি আবেদন করেছি। আমি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাকরিবিধি মেনে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই আমি অনার্স-মাস্টার্স করেছি। তবে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র দেখতে পারেননি তিনি।
ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এ কে এম আব্দুস ছত্তার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কাগজপত্র সঠিক না থাকলে কি তিনি আবেদন করেছেন? কাগজপত্র যাদের যাচাই-বাছাই করার কথা তারা যদি যাচাই-বাছাই করে মনে করেন কোনো প্রার্থীর কাগজপত্র ঠিক নেই তাহলে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করবেন। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু করার নেই।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিষ্ণু পদ ঘোষাল দৈনিকি শিক্ষাডটকমকে বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, আবেদন বাছাই কমিটিতে যারা থাকবেন তারা এবং নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করবেন। নিয়োগে কোনো অনিয়ম অভিযোগ উঠলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।