কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর নেন বিজ্ঞান ক্লাস

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যায়লটিতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ সব বিষয়ের ১৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে ১৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের পদটি শূন্য রয়েছে। এই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির দুইজন (কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও অফিস সহকারী) এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন ৫ জন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও এই স্কুলে প্রায়ই ক্লাস করান কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও অফিস সহকারী।

স্কুলটিকে এ ধরনের ঘটনা অনেক দিন ধরে চলতে থাকলেও গত বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নজরে আসে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমানের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি হাটের গরু ওই স্কুলের মাঠে গাড়িতে লোড-আনলোড করা হয় এমন খররের ভিত্তিতে গত ২১ সেপ্টেম্বর ইউএনও সেখানে পরিদর্শনে যান। এ সময় ঘটনার সত্যতাও পান তিনি। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে অফিস কক্ষে যান ইউএনও। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেদিন অনুপস্থিত ছিলেন। পরে সহকারী প্রধান শিক্ষককে খোঁজ করলে তাকেও পাওয়া যায়নি বিদ্যালয়ে। পুরো বিষয়টি ইউএনও’র কাছে অসংগতি মনে হলে তিনি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ‘ক’ শাখার ক্লাস রুমে যান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান রায়হান মিয়া নামের এক ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছেন। এ সময় তার আচরণ ও ক্লাস নেওয়ার ধরণ শিক্ষক সুলভ না হওয়ায় ইউএনও তাঁর পরিচয় জানতে চান। পরে তিনি নিজের পরিচয় বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর হিসেবে দেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, এই বিষয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণে আছেন, তাই তিনি পক্সি দিচ্ছেন। 

এ সময় ইউএনও ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন এই স্যার (কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর) প্রায়ই তাদের ক্লাস নেন। ইউএনও ওই ক্লাস রুম থেকে পাশের একই শ্রেণির ‘খ’ শাখার ক্লাস রুমে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন সামাজিক বিজ্ঞানের ক্লাস নিচ্ছেন মো. মনিরুজ্জামান নামে একজন। এখানে তার পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তিনি ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী বলে পরিচয় দেন। তখন তিনিও বলেন এই বিষয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণে তাই তিনি পক্সি দিচ্ছেন। তবে এখানেও ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অফিস সহকারী প্রায়ই শিক্ষার্থীদের ক্লাস করান। 

এদিকে, ইউএনও আসার খবর শুনে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিখিল দেবনাথ বিদ্যালয়ে আসেন। তিনি ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান বিদ্যালয়ের একটি কাজে বাইরে ছিলেন। পরে ইউএনও বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে হাজিরা খাতা দেখে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর না করে সহকারী প্রধান শিক্ষককে পরিদর্শন বই নিয়ে ইউএনও অফিসে যাওয়ার কথা বলে চলে যান।

বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও এখানে মানা হয় না কোন নিয়মনীতি। যে কারণে এখানে প্রতিবছর প্রত্যাশা অনুযায়ী সফলতা আসে না।

এ বিষয়ে চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার দেবনাথ বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৬৪ জন। শিক্ষার্থী বেশি থাকায় ষষ্ঠ, সপ্তম ও নবম শ্রেণিতে দুটি করে শাখা করা হয়েছে। কিন্তু শাখার অনুমোদন না থাকায় সরকারিভাবে আমরা শিক্ষক পাচ্ছি না। শিক্ষকের সংকট রয়েছে বিধায় কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও অফিস সহায়ক দিয়ে মাঝে মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো হয়। 

তিনি আরও জানান, ওই দুইজনের মধ্যে একজন অনার্স এবং অন্যজন বিএ পাস।

এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূর-ই-জান্নাত বলেন, উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়েই ২/১ জন করে শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। যেহেতু এনটিআরসি এখন নিয়োগ দিচ্ছে পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়গুলোর শূন্যপদ পূরণ হয়ে যাবে। তবে আমার জানা মতে, চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়ে ইসলাম শিক্ষার একজন শিক্ষক ছাড়া আর কোন পদ শূন্য নেই। তবে তারা কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর ও অফিস সহকারী দিয়ে ক্লাস করিয়ে থাকলে বিষয়টি আমার জানা নেই। এটা স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব রুটিনে করে থাকতে পারে। 

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমান বলেন, আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে আসতে বলেছি। উনারা আসলে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত - dainik shiksha প্রাথমিকের সাড়ে ৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হাইকোর্টে স্থগিত আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি - dainik shiksha আন্দোলন স্থগিত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের, ৭ দিনের মধ্যে কমিটি পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির - dainik shiksha আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের নির্দেশ ইউজিসির কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি - dainik shiksha পদত্যাগ করেছেন সেই তিন বিতর্কিত বিচারপতি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান - dainik shiksha ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিচার হওয়া উচিত: সলিমুল্লাহ খান বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042920112609863