আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এই করের বোঝা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টিউশন ফি বাড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সে ক্ষেত্রে করের বোঝা ঘুরেফিরে শিক্ষার্থীদের ওপরই চাপবে। এমন ভাবনা থেকে এই কর প্রস্তাবের বিরোধিতায় আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যয়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে মানববন্ধন করে আজ বৃহস্পতিবার ধানমণ্ডির শংকরে এবং শুক্রবার রামপুরায় মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।
জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের খসড়া বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) চালুর প্রস্তাব করা হয়েছিল। এরপরই টিউশন ফি বাড়িয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এই অবস্থায় মূসক প্রত্যাহারের দাবিতে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের আন্দোলনের মুখে ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭.৫ করার প্রস্তাব দিলেও আন্দোলন থামেনি। এ অবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। এর আগে ২০১০ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছিল। তবে মামলার কারণে তা আদায় হয়নি।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে উপস্থাপন করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রযোজ্য সাধারণ করহার হ্রাস করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা শুধু তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজ থেকে উদ্ভূত আয়ের ১৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করা হয়েছিল। মহান এই সংসদে আমি এই করহার অর্থ আইনের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি।’
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বাজেট-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার সৃষ্টি করেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিক সংকটে পড়বে এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির কারণে উচ্চশিক্ষা অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে। করোনার কারণে বর্তমানে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই টিউশন ফি দিতে পারছেন না। এই সময়ে করারোপ করা হলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হবে।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
জানা যায়, দেশে বর্তমানে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এগুলোতে বেশির ভাগই মধ্যবিত্তের সন্তানরা পড়ালেখা করেন। তাঁদের অনেকেই টিউশনি বা পার্টটাইম চাকরি করে নিজের টিউশন ফি পরিশোধ করেন। বর্তমান হারে টিউশন ফি দিতেই শিক্ষার্থীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরপর আবার টিউশন ফি বাড়লে অনেক শিক্ষার্থীরই পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী বলেন, ‘এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় মধ্যবিত্তের সন্তানরা। ফলে করের বোঝাটা এই মধ্যবিত্তের ওপরই পড়ল। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মেয়েদের ওপর। কারণ অভিভাবকরা এখনো মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের পেছনে বেশি অর্থ ব্যয় করেন। ফলে অনেক অভিভাবকই তাঁর মেয়ে সন্তানকে আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে পাঠাবেন না।’
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিধান থাকলেও অর্থাভাবে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এখনো স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। এ ছাড়া বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বাদে বাকিগুলোতে করোনা মহামারির এই সময়ে শিক্ষার্থীও পাওয়া যাচ্ছে না। উপরন্তু এই সময়ে কর আরোপ করা হলে অনেক ছোট বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের উপক্রম হবে। ফলে তারা টিকে থাকতে ফের সার্টিফিকেট বিক্রি বা কোনো রকম ভর্তি করে সার্টিফিকেট দেওয়ার মতো কার্যক্রম চালাতে পারে।
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘প্রথমত আমি বলব, এ ধরনের কর আরোপ বেআইনি। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে কর আরোপ করা যায় না। এ ছাড়া আইনে বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোনো কাজে টাকা ব্যয় করা যাবে না। এর পরও কর আরোপ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইবে তাদের উপার্জন বাড়াতে। এর প্রভাব নিশ্চিতভাবেই শিক্ষার্থীদের ওপর পড়বে।’