করোনাকালে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কৌশল

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে কভিড ১৯ পরিস্থিতির কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে সরকারের উদ্যোগে। ২০২০ সালে সব শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের কার্যক্রম বন্ধ করে পরবর্তী শ্রেণীতে প্রমোশন দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০২১ সালে সব শ্রেণীর শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পেয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২২ মে ২০২১ পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবাই মনে করেন আগে করোনার হাত থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম-শিশুদের রক্ষা করতে হবে। মানুষ বাচলে, শিশুরা বাচলে তাদের শিক্ষা দেয়া যাবে, তারা আবার হাসতে হাসতে স্কুলে যেতে পারবে। এজন্য করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বিদ্যালয় বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেমন তেমনি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাও। আর দেশে করোনাকালে স্কুল বন্ধ রাখার সরকারের সিদ্ধান্ত অবশ্যই অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। রোববার (২৫ এপ্রিল) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, গত কিছুদিন ধরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে তার বক্তৃতায় বলেছেন, আমরা শিশুদের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারি না। শিশুদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাবনা যথার্থ। গত বছর ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদ্যাপনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে সব শিক্ষা বন্ধের দেয়া হয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইতোমধ্যে বিদ্যালয়গুলো ‘এসাইনমেন্ট’ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন কার্যক্রম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তা সত্ত্বেও শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে বিগত সময়ের ক্ষতি কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়। এ বিষয়ে শিক্ষা বিভাগে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু মতামত উপস্থাপন করছি।

১. শিক্ষাবর্ষ ২০২০-এর আলোকে সংশ্লিষ্ট শ্রেণীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বিবেচনায় নিয়ে দুই মাসের জন্য একটি রিকভারি প্লান তৈরি করা।

২. শিক্ষাবর্ষ ২০২১ সালের পাঠ্যপুস্তকের আলোকে জুলাই থেকে নভেম্বর ২০২১-এর সময়টিকে বিবেচনায় নিয়ে সিলেবাস পুনঃবিন্যাস করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক জুন ২০২১-এর মধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৩. শিক্ষাবর্ষ ২০২২ এর জন্য প্রণীত পাঠ্যপুস্তক থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কমিয়ে পুরো এক বছরের সিলেবাস থেকে দুই মাস সমন্বয় করে ১০ (দশ) মাসে রূপান্তর করা।

৪. শিক্ষাবর্ষ ২০২৪ কে বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩-এর অনুরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৫. শিক্ষাবর্ষ ২০২০ এবং ২০২১-এ অধ্যয়নরত কোন শিক্ষার্থী যেন বিদ্যালয় থেকে ঝরে না পড়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ এখনই প্রয়োজন।

৬. প্রাথমিক থেকে সব স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝরেপড়া উপক্রম শিক্ষার্থী পরিবার চিহ্নিত করে তাদের আর্থিক সহায়তা বা সুদমুক্ত শিক্ষা ঋণ প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা প্রদান ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।

৭. দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় আনার পদক্ষেপ গ্রহণ।

৮. ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় এবং প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করা যাতে প্রতিটি দপ্তর শিক্ষা কার্যক্রম সরাসরি মনিটর করতে পারে।

৯. করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনায় আরও বিলম্বিত হয় তাহলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকাকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে স্থানীয় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহায়তায় ৩ থেকে ৫ সদস্যের ভলান্টিয়ার টিম গঠন করা।

১০. গঠিত ভলান্টিয়ার টিম তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত পাড়া/গ্রাম/মহল্লায় প্রতিদিন কমপক্ষে তিন ঘণ্টা নির্ধারিত পাঠ পর্যবেক্ষণ করবেন।

১১. সপ্তাহান্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট প্রেরণ। পরবর্তীতে ক্লাস্টারের দায়িত্ব নিয়োজিত সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক প্রণীত রিপোর্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার হয়ে প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ নিশ্চিত করা।

১২. উল্লিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

লেখক : রেজ্জাক সিদ্দিকী,গবেষণা কর্মকর্তা (সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055198669433594